poet
stringclasses
137 values
category
stringclasses
21 values
poem
stringlengths
9
18.7k
বিষ্ণু দে
প্রেমমূলক
অন্ধকারে আর রেখো না ভয়, আমার হাতে ঢাকো তোমার মুখ দু-চোখে দিয়ে দাও দুঃখ সুখ, দু-বাহু ঘিরে গড়ো তোমার জয়, আমার তালে গাঁথো তোমার লয় | অসহ আলো আজ ঘৃণায় দগ্ধ, দূষিত দিনে আর নেইকো রুচি, অন্ধকারই একমাত্র শুচি,প্রেমের নহবত ঘৃণায় স্তব্ ধ | আমার হাতে ঢাকো তোমার মুখ ||
বিষ্ণু দে
স্বদেশমূলক
সুজলা সুফলা সেই মলয়শীতলা ধরণীভরণী বন্দনীয় মাতৃভূমি ঋষি (ও হাকিম) বঙ্কিমচন্দ্রের সেই গণ-স্তোত্রগান এখনও হয়তো আনন্দের শীর্ষ-চূড়ে কোনো সভায় স্বয়ম্ রবিঠাকুরের সুরে সর্বাঙ্গ শিহরে অচৈতন্য শব্ দব্রহ্মে ধনী সমকণ্ঠে ওঠে সহস্রের গান, পাশের দূরের দেহমনে সমভাব, মৈত্রী — রাখীবন্ধনে শপথে | সে-গান প্রাণের রন্ধ্রে, মন জাগে ধ্রুব ছন্দে, গানে ভাবের সমুদ্র থেকে ভাষা ওঠে দোঁহে একাকার, ষেমন অন্তরে দেহ জাগে, দেহে স্বপ্নের প্রয়াণে ভাষা ওঠে সফেন চঞ্চল নৃত্যে | পরমুহূর্তে আবার কাশীমিত্রঘাটে দেখ, যিনি ভব্য সুশোভন সদা অসামান্য দিব্যকান্তি কবি, আমাদের ভাগ্য গণি, নগ্নবক্ষে সদ্যস্নাত ! — সুখদা বরদা দেশে, পথে ||
বিষ্ণু দে
মানবতাবাদী
তোমাদেরও মনে হয়, মনে হয় তোমারও প্রত্যেকে লেনিন ? লাজুক সুকান্ত ওই কথাটাই বলেছিল কৈশোর সংরাগে বহুদিন আগে – সহজ কিশোর বিনম্র কবি বাংলায় তার কথা শতবর্ষে জাগে | কারণ লেনিন নন দেবতা বা পুরাণ-নায়ক, তিনি একালের বীর, স্থির ধীর, ভাবুক, আত্মস্থ, নেতা, মানবিক ; নিজেকে জাহির কখনোই করেননি ; এমনকি কোন্ এক সভাঘরে স্বয়ং লেনিন লেনিনিস্ট অত্যুক্তিতে শোনা যায় উঠে যান সংকোচে বিরাগে | তাই আজ মনে হয় যদি সারা দেশ ভাবে, ভাবেপ্রতিদিন সাধারণ মানুষেরা, সকলেই, নিত্য ভাবে দীন হই নই কভু হীন, তাহলে হয়তো প্রতি মাস হবে অক্টোবর, প্রতিদিন প্রত্যেকে লেনিন | শুনেছি যে লেনিনেরও সাধ ছিল একদিন সকলেই হ’য়ে যাবে শতায়ু লেনিন ||
হাসন রাজা
ভক্তিমূলক
এগো মইলা, তোমার লাগিয়ে হাছন রাজা বাউলা। ভাবতে ভাবতে হাছন রাজা হইল এমন আউলা।। দিনে রাইতে উঠে মনে, প্রেমানলের শওলা। আর কত সহিব প্রাণে, তুই বন্ধের জ্বালা।। সোনার রং অঙ্গ আমার, হইয়াছে রে কালা। অন্তরে বাহিরে আমার জ্বলিয়ে রহিল কয়লা।। লোকে বলে হাছন রাজা হইল রে আজুলা। হাতে তলি দিয়া গিল্লা, করেরে কট মুল্লা।। আজুলা হইয়া হাছন রাজায় বলে আল্লা। বারে বারে বলে, লাইলাহা ইল্লাল্লা। নাচে নাচে হাছন রাজা হইয়া ফানা ফিল্লা।।
হাসন রাজা
ভক্তিমূলক
আমি না লইলাম আল্লাজির নাম। না কইলাম তার কাম। বৃথা কাজে হাছন রাজায় দিন গুয়াইলাম।। ভবের কাজে মত্ত হইয়া দিন গেল গইয়া। আপন কার্য না করিলাম, রহিলাম ভুলিয়া।। নাম লইব নাম লইব করিয়া আয়ু হইল শেষ। এখনও না করিলাম প্রাণ বন্ধের উদ্দেশ।। আশয় বিষয় পাইয়া হাছন (তুমি) কর জমিদারি। চিরকাল থাকিবেনি হাছনরাজা লক্ষ্মণছিরি।। কান্দে কান্দে হাছন রাজা, কী হবে উপায়। হাসরের দিন যখন পুছিবে খোদায়।। ছাড় ছাড় হাছন রাজা, এই ভবের আশ। (কেবল) এক মনে চিন্তা কর, হইতাম বন্ধের দাস।।
হাসন রাজা
রূপক
রঙ্গিয়া রঙ্গে আমি মজিয়াছি রে। মজিয়াছি রে, আমি ডুবিয়াছি রে।। আরশি পড়শী যাই চল, যাইমু বন্ধের সনে রে। কিবা ক্ষণে গিয়াছিলাম সুরমা নদীর গাঙ্গে। বন্ধে মোরে ভুলাইলো, রঙ্গে আর ঢঙ্গে রে।। হাটিয়া যাইতে খসিয়া যায় বন্ধে অঙ্গে, অঙ্গে। ধনকড়ি তোর কিছু চায় না, যৌবন কেবল মাঙ্গে রে। হাছন রাজায় নাচন করে প্রেমেরি তরঙ্গে। পাইলে কখন ছাড়িবে না, এই মনে পাঙ্গে রে।।
হাসন রাজা
রূপক
নিশা লাগিল রে, নিশা লাগিল রে, বাঁকা দুই নয়নে নিশা লাগিল রে। হাসন রাজার পিয়ারীর প্রেমে মজিল রে।। ছটফট করে হাসন রাজা দেখিয়া চাঁন মুখ হাসন জানের মুখ দেখিয়া জন্মের গেল দুখ।। হাসন জানের রূপটা দেখি ফালদি ফালদি উঠে চিড়া বাড়া হাসন রাজার বুকের মাঝে টুটে।।আরও পড়ুন… হাসন রাজার সকল গান 
হাসন রাজা
চিন্তামূলক
লোকে বলে বলেরে ঘর-বাড়ি ভালা নাই আমার কি ঘর বানাইমু আমি শূণ্যেরও মাঝার।। ভালা কইরা ঘর বানাইয়া কয়দিন থাকমু আর আয়না দিয়া চাইয়া দেখি পাকনা চুল আমার।। এ ভাবিয়া হাসন রাজা ঘর-দুয়ার না বান্ধে কোথায় নিয়া রাখব আল্লায় তাই ভাবিয়া কান্দে।। জানত যদি হাসন রাজা বাঁচব কতদিন বানাইত দালান-কোঠা করিয়া রঙিন।।আরও পড়ুন… হাসন রাজার সকল গান 
হাসন রাজা
রূপক
সোনা বন্ধে আমারে দেওয়ানা বানাইলো সোনা বন্ধে আমারে পাগল করিল। আরে না জানি কি মন্ত্র করি জাদু করিল।। রূপের ঝলক দেখিয়া তার আমি হইলাম কানা সেই অবধি লাগল আমার শ্যাম পিরিতির টানা।। হাসন রাজা হইল পাগল লোকের হইল জানা নাচে নাচে পালায় পালায় আর গায়ে জানা।। মুখ চাহিয়া হাসে আমার যত আদি পরী দেখিয়াছি বন্ধের দুখ ভুলিতে না পারি।।আরও পড়ুন… হাসন রাজার সকল গান 
অন্নদাশঙ্কর রায়
ভক্তিমূলক
যতোকাল রবে পদ্মা-মেঘনা- গৌরী-যমুনা-বহমান ততোকাল র’বে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান, চারিদিকে আজ রক্তগঙ্গা অশ্রু গঙ্গা বহমান নেই-নেই ভয় হবে-হবে জয় জয় শেখ মুজিবুর রহমান।
রামনিধি গুপ্ত
প্রেমমূলক
পিরীতি না জানে সখী (সখি), সে জন সুখী বল কেমনে ? যেমন তিমিরালয় দেখ দীপ বিহনে || প্রেমরস সুধাপান, নাহি করিল যে জন, বৃথায় তার জীবন, পশু সম গণনে || ১ ||
রামনিধি গুপ্ত
স্বদেশমূলক
নানান্ দেশে নানান্ ভাসা (ভাষা) বিনে স্বদেশীয় ভাসে পূরে কি আশা ? কত নদী সরোবর, কি বা ফল চাতকীর | ধরাজল বিনে কভু ঘুচে কি ত্রিষা (তৃষা) ?
রামনিধি গুপ্ত
প্রেমমূলক
আসিবে হে প্রাণ কেমনে এখানে | ননদী দীরুণ অতি, আছে সে সন্ধানে || রাখিতে পরাণ মোর, আমি নাহি পারি আর | পিরীতে এই সে হ’লো সংশয় জীবনে || ১ || মদন রোদন করে, বিরস দেখিয়ে মোরে | লাজ ভয় কাল সম দয়া নাহি জানে || ২ || নিদয় বিধাতা যারে, সদয় কে হয় তারে | আমার উপায় ইথে হইবে কেমনে || ৩ || ধিক্ ধিক্ নারীগণে, মিলয়ে পুরুষ সনে | কুল তেয়াগিতে নারে, মরে মন মানে || ৪ ||
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ
প্রেমমূলক
স্মৃতির স্নায়ুরা দীপ্র কুকুরের দাঁত, বিষদাঁত বিঁধিয়েছে অস্তিত্বের পায়ে, রক্তে সেই যন্ত্রণার আততায়ী তাত উন্মাদ পাক খায়; ডাইনে আর বাঁয়ে বিভীষিকা-জলাতঙ্ক-বিকল স্নায়ুরা: ভয়াল কুকুর দিনেরাত্রে ছুটে আসে; দুচোখে বেঁধেছে বাসা কুটিল মৃত্যুরা, ক্ষিপ্ত কুকুরের মুখ চোখে শুধু ভাসে। স্মৃতির স্নায়ুরা দীর্ণ জীবিত করাত- অহোরাত্র ঘুরে যায় মাংসের নিচে, শরীরের খাঁজে তার আততায়ী দাঁত ছিঁড়ে নেয় মেদ ত্বক ক্ষুধার্ত কিরিচে। নিদ্রাহীন অন্ধকার সামনে পিছনে টুঁটি চেপে ধরে আছে আমার আয়ুর; কান্তা, তুমি তো ছিলে জীবনের গানে: সে স্মৃতিরা ছেঁড়ে আজ স্বপ্ন স্নায়ুর।
আবদুল হাকিম
স্বদেশমূলক
কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস। সে সবে কহিল মোতে মনে হাবিলাষ।। তে কাজে নিবেদি বাংলা করিয়া রচন। নিজ পরিশ্রম তোষি আমি সর্বজন।। আরবি ফারসি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ। দেশী ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ।। আরবি ফারসি হিন্দে নাই দুই মত। যদি বা লিখয়ে আল্লা নবীর ছিফত।। যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ। সেই বাক্য বুঝে প্রভু আগে নিরঞ্জন।। সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী। বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী।। মারফত ভেদে যার নাহিক গমন। হিন্দুর অক্ষর হিংসে সে সবের গণ।। যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী। সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।। দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়। নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।। মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি। দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি।।
ফররুখ আহমদ
প্রকৃতিমূলক
ঝুমকো জবা বনের দুল উঠল ফুটে বনের ফুল। সবুজ পাতা ঘোমটা খোলে, ঝুমকো জবা হাওয়ায় দোলে। সেই দুলুনির তালে তালে, মন উড়ে যায় ডালে ডালে।
ফররুখ আহমদ
রূপক
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি? এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে? সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে? তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে; অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি। রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি? দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষে কোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে? এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’ব তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব অস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী। তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে; সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি। রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি? বন্দরে বসে যাত্রীরা দিন গোনে, বুঝি মৌসুমী হাওয়ায় মোদের জাহাজের ধ্বনি শোনে, বুঝি কুয়াশায়, জোছনা- মায়ায় জাহাজের পাল দেখে। আহা, পেরেশান মুসাফির দল। দরিয়া কিনারে জাগে তক্দিরে নিরাশায় ছবি এঁকে! পথহারা এই দরিয়া- সোঁতারা ঘুরে চলেছি কোথায়? কোন সীমাহীন দূরে? তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে; একাকী রাতের ম্লান জুলমাত হেরি! রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি? শুধু গাফলতে শুধু খেয়ালের ভুলে, দরিয়া- অথই ভ্রান্তি- নিয়াছি ভুলে, আমাদেরি ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী। মোদের খেলায় ধুলায় লুটায়ে পড়ি। কেটেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী। সওদাগরের দল মাঝে মোরা ওঠায়েছি আহাজারি, ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দনধ্বনি আওয়াজ শুনছি তারি। ওকি বাতাসের হাহাকার,- ও কি রোনাজারি ক্ষুধিতের! ও কি দরিয়ার গর্জন,- ও কি বেদনা মজলুমের! ও কি ধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী। পাঞ্জেরি! জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি হেরি, জাগো অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি হেরি! দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরি, কত দেরি!!
ফররুখ আহমদ
রূপক
কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হল জানি না তা । নারঙ্গি বনে কাঁপছে সবুজ পাতা । দুয়ারে তোমার সাত সাগরের জোয়ার এনেছে ফেনা। তবু জাগলে না ? তবু, তুমি জাগলে না ? সাত সাগরের মাঝি চেয়ে দেখো দুয়ারে ডাকো জাহাজ, অচল ছবি সে, তসবির যেন দাঁড়ায়ে রয়েছে আজ । হালে পানি নাই, পাল তার ওড়ে নাকো, হে নাবিক! তুমি মিনতি আমার রাখো; তুমি ওঠে এসো, তুমি ওঠে এসো মাঝি মাল্লার দলে দেখবে তোমার কিশতি আবার ভেসেছে সাগর জলে, নীল দরিয়ায় যেন সে পূর্ণ চাঁদ মেঘ তরঙ্গ কেটে কেটে চলে ভেঙে চলে সব বাঁধ । তবু তুমি জাগো, কখন সকাল ঝরেছে হাসনাহেনা এখনো তোমার ঘুম ভাঙলো না ? তবু, তুমি জাগলে না ? দুয়ারে সাপের গর্জন শোনো নাকি ? কত অসংখ্য ক্ষুদধিতের সেথা ভির, হে মাঝি ! তোমার বেসাতি ছড়াও, শোনো, নইলে যে-সব ভেঙে হবে চৌচির ।তুমি দেখছ না, এরা চলে কোন আলেয়ার পিছে পিছে ? চলে ক্রমাগত পথ ছেড়ে আরও নিচে ! হে মাঝি ! তোমার সেতারা নেভেনি একথা জানো তো তুমি, তোমার চাঁদনি রাতের স্বপ্ন দেখেছে এ মরুভূমি, দেখো জমা হল লালা রায়হান তোমার দিগন্তরে; তবু কেন তুমি ভয় পাও, কেন কাঁপো অজ্ঞাত ডরে ! তোমার জাহাজ হয়েছে কি বানচাল, মেঘ কি তোমার সেতারা করে আড়াল ? তাই কি অচল জাহাজ ভাঙা হাল তাই কি কাঁপছে সমুদ্র ক্ষুধাতুর বাতাস কাঁপানো তোমার ও ফাঁকা পাল ? জানি না, তবু ডাকছি তোমাকে সাত দরিয়ার মাঝি, প্রবাল দ্বীপের নারিকেল শাখা বাতাসে উঠেছে বাজি ?এ ঘুমে তোমার মাঝিমাল্লার ধৈর্য নেইকো আর, সাত সমুদ্র নীল আকাশে তোলে বিষ ফেনভার, এদিকে অচেনা যাত্রী চলেছে আকাশের পথ ধরে নারঙ্গি বনে কাঁপছে সবুজ পাতা । বেসাতি তোমার পূর্ণ করে কে মারজানে মর্মরে ? ঘুমঘোরে তুমি শুনছ কেবল দুঃস্বপ্নের গাঁথা ।উচ্ছৃঙ্খল রাত্রির আজো মেটেনি কি সব দেনা ? সকাল হয়েছে । তবু জাগলে না ? তবু তুমি জাগলে না ? তুমি কি ভুলেছ লবঙ্গ ফুল, এলাচের মৌসুমী, যেখানে ধূলিতে কাঁকরে দিনের জাফরান খোলে কলি, যেখানে মুগ্ধ ইয়াসমিনের শুভ্র ললাট চুমি পরীর দেশের স্বপ্ন সেহেলি জাগে গুলে বকাওলি ? ভুলেছ কি সেই প্রথম সফর জাহাজ চলেছে ভেসে অজানা ফুলের দেশে, ভুলেছ কি সেই জমরুদ তোলা স্বপ্ন সবার চোখে ঝলসে চন্দ্রলোকে, পাল তুলে কোথা জাহাজ চলেছে কেটে কেটে নোনা পানি, অশ্রান্ত সন্ধানী ।
ফররুখ আহমদ
মানবতাবাদী
সকল রুদ্ধ ঝরোকা খুলে দাও খুলে দাও সকল রুদ্ধ দরোজা। আসুক সাত আকাশের মুক্ত আলো আর উচ্ছল আনন্দের মত বাগে এরেমের এক ঝাঁক মৌমাছি .. .. যেন এই সব পাথরের ফুলের মাঝখান থেকে আমি চিনে নিতে পারি রক্তমনির চেয়েও লাল সুনভিত একটি তাজা রক্ত গোলাপ; আমার ব্যথিত আত্মা আর্তনাদ করে উঠলো দাউদের পুত্র সোলায়মানের মতো কেননা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের আকাশ আছে পৃথিবীতে চিরন্তন শুধু সত্যের অন্বেষা।
ফররুখ আহমদ
প্রকৃতিমূলক
বৃষ্টি এল কাশ বনে জাগল সাড়া ঘাস বনে, বকের সারি কোথা রে লুকিয়ে গেল বাঁশ বনে। নদীতে নাই খেয়া যে, ডাকল দূরে দেয়া যে, কোন সে বনের আড়ালে ফুটল আবার কেয়া যে।গাঁয়ের নামটি হাটখোলা, বিষটি বাদল দেয় দোলা, রাখাল ছেলে মেঘ দেখে, যায় দাঁড়িয়ে পথ-ভোলা। মেঘের আঁধার মন টানে, যায় সে ছুটে কোন খানে, আউশ ধানের মাঠ ছেড়ে আমন ধানের দেশ পানে।
বীথি চট্টোপাধ্যায়
প্রেমমূলক
স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে যেই বউকে বুকে জড়িয়ে ধরবে তখন তোমার ভীষণভাবে আমার কথাই মনে পড়বে। আমার বুকের কলহাস্য এবং নিছক বুকের স্পর্শ— আমার রূপের টুকরো টুকরো অনুষঙ্গ, হাতের নরম আঙুলগুলো তোমার চুলে খেলা করবে।এসব কথা বাড়িয়ে বলা একদমই নয় যখন তুমি আমায় নিয়ে জড়িয়ে ছিলে তখন থেকেই আমার ভুরু, চিবুকের ডৌল, শাড়িতে ঢাকা পায়ের পাতা, বিঝতে পারলো অন্যকোনও মেয়ের সঙ্গে শুয়ে থাকলেও . . .পাপের মতো এসব কথা শোনায় যেন কেমন করে পাপের গতি ভয় হারালো ? পাপও এত পবিত্র হয়! জানা ছিল না। সে যাই হোক, এবার তুমি যে মুহূর্তেই প্রেমে পড়বে, তক্ষুনি ঠিক এমনভাবে আমার খতাই মনে পড়বে।
বীথি চট্টোপাধ্যায়
প্রেমমূলক
আমার চোখে বসন্ত দারুণ চৈত্রমাস চতুর্দিকে শিমূল-পলাশ কৃষ্ণচূড়ার ত্রাস।ঝড় উঠেছে নিখুঁত কালো বৃষ্টি ভেজা রাত আঁচল দিয়ে দুঃখ ঢাকি কোথায় তোমার হাত ?তব্ধ যদি ভালোবাসা প্রেমের-কম্পন ফিরিয়ে দাও কিশোরীকাল প্রথম চুম্বন।ভালোবাসার আগুন ঝড়ে চাইনি কোনো দাম অশ্রুবিহীন চক্ষু হল প্রেমের পরিণাম।এই সময়েই ভিন্ন হলে এমন চৈত্রমাস ভালোবাসার ফুটছে কলি, ফাল্গুন বাতাস!এই যে চোখ এই যে প্রেম, এই যে হা-হুতাশ এই বসন্তে দেবো কাকে প্রেমের আস্বাস ?আমার চোখে বসন্ত দারুণ চৈত্রমাস ভালোবাসা বাসার পরে, ভাঙলে বিশ্বাস!
গোলাম মোস্তফা
স্তোত্রমূলক
অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি বিচার দিনের স্বামী। যত গুণগান হে চির মহান তোমারি অন্তর্যামী।দ্যুলোক-ভূলোক সবারে ছাড়িয়া তোমারি চরণে পড়ি লুটাইয়া তোমারি সকাশে যাচি হে শকতি তোমারি করুণাকামী।সরল সঠিক পূণ্য পন্থা মোদের দাও গো বলি, চালাও সে-পথে যে-পথে তোমার প্রিয়জন গেছে চলি।যে-পথে তোমার চির-অভিশাপ যে-পথে ভ্রান্তি, চির-পরিতাপ হে মহাচালক,মোদের কখনও করো না সে পথগামী।
গোলাম মোস্তফা
ছড়া
নুরু, পুশি, আয়েশা, শফি সবাই এসেছে আম বাগিচার তলায় যেন তারা হেসেছে। রাঁধুনিদের শখের রাঁধার পড়ে গেছ ধুম, বোশেখ মাসের এই দুপুরে নাইকো কারো ঘুম। বাপ মা তাদের ঘুমিয়ে আছে এই সুবিধা পেয়ে, বনভোজনে মিলেছে আজ দুষ্টু কটি মেয়ে। বসে গেছে সবাই আজি বিপুল আয়োজনে, ব্যস্ত সবাই আজকে তারা ভোজের নিমন্ত্রণে। কেউবা বসে হলদি বাটে কেউবা রাঁধে ভাত, কেউবা বলে দুত্তুরি ছাই পুড়েই গেল হাত। বিনা আগুন দিয়েই তাদের হচ্ছে যদিও রাঁধা, তবু সবার দুই চোখেতে ধোঁয়া লেগেই কাঁদা। কোর্মা পোলাও কেউবা রাঁধে, কেউবা চাখে নুন, অকারণে বারে বারে হেসেই বা কেউ খুন। রান্না তাদের শেষ হল যেই, গিন্নী হল নুরু, এক লাইনে সবাই বসে করলে খাওয়া শুরু। ধূলোবালির কোর্মা-পোলাও আর সে কাদার পিঠে, মিছিমিছি খেয়া সবাই, বলে- বেজায় মিঠে। এমন সময় হঠাৎ আমি যেই পড়েছি এসে, পালিয়ে গেল দুষ্টুরা সব খিলখিলিয়ে হেসে।নুরু, পুশি, আয়েশা, শফি সবাই এসেছে আম বাগিচার তলায় যেন তারা হেসেছে। রাঁধুনিদের শখের রাঁধার পড়ে গেছ ধুম, বোশেখ মাসের এই দুপুরে নাইকো কারো ঘুম। বাপ মা তাদের ঘুমিয়ে আছে এই সুবিধা পেয়ে, বনভোজনে মিলেছে আজ দুষ্টু কটি মেয়ে। বসে গেছে সবাই আজি বিপুল আয়োজনে, ব্যস্ত সবাই আজকে তারা ভোজের নিমন্ত্রণে। কেউবা বসে হলদি বাটে কেউবা রাঁধে ভাত, কেউবা বলে দুত্তুরি ছাই পুড়েই গেল হাত। বিনা আগুন দিয়েই তাদের হচ্ছে যদিও রাঁধা, তবু সবার দুই চোখেতে ধোঁয়া লেগেই কাঁদা। কোর্মা পোলাও কেউবা রাঁধে, কেউবা চাখে নুন, অকারণে বারে বারে হেসেই বা কেউ খুন। রান্না তাদের শেষ হল যেই, গিন্নী হল নুরু, এক লাইনে সবাই বসে করলে খাওয়া শুরু। ধূলোবালির কোর্মা-পোলাও আর সে কাদার পিঠে, মিছিমিছি খেয়া সবাই, বলে- বেজায় মিঠে। এমন সময় হঠাৎ আমি যেই পড়েছি এসে, পালিয়ে গেল দুষ্টুরা সব খিলখিলিয়ে হেসে।
গোলাম মোস্তফা
গীতিগাথা
বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর- পুত তাহার হুমায়ুন বুঝি বাঁচে না এবার আর! চারিধারে তার শনায়ে আসিছে মরণ-অন্ধকার।রাজ্যের যত বিজ্ঞ হেকিম করিবাজ দরবেশ এসেছে সবাই, দিতেছে বসিয়া ব্যবস্থা সবিশেষ, সেবাযত্নের বিধিবিধানে তু্রটি নাহি এক লেশ।তবু তার সেই দুরন্ত রোগ হটিতেছে নাক হায়, যত দিন যায়, দুর্ভোগ তার ততই বাড়িয়া যায়- জীবন-প্রদীপ নিভিয়া আসিছে অস্তরবির প্রায়।শুধাল বাবর ব্যগ্রকনেঠ ভিষকবৃন্দে ডাকি, ‘বল বল আজ সত্যি করিয়া, দিও নাকো মোরে ফাঁকি, এই রোগ হতে বাদশাজাদার মুক্তি মিলিবে নাকি?নতমস্তকে রহিল সবাই, কহিল না কোন কথা, মুখর হইয়া উঠিল তাদের সে নিষ্ঠুর নীরবতা শেলসম আসি বাবরের বুকে বিঁধির কিসের ব্যথ্যা!হেনকালে এক দরবেশ উঠি কহিলেন- ‘সুলতান, সবচেয়ে তব শ্রেষ্ঠ যে-ধন দিতে যদি পার দান, খুশি হয়ে তবে বাঁচার আল্লা-বাদশাজাদার প্রাণ।শুনিয়া সে কথা কহিল বাবর শঙ্কা নাহিক মানি- ‘তাই যদি হয়, প্রস্তুত আমি দিতে সেই কোরবানি, সবচেয়ে মোর শ্রেষ্ট যে ধন জানি তাহা আমি জানি।’এতেক বলিয়া আসন পাতিয়া নিরিবিলি গৃহতল গভীর ধেয়ানে বসিল বাবর শান্ত অচঞ্চলে, প্রার্থনারত হাতদুটি তার, নয়নে অশ্রুজল।কহিল কাদিঁয়া – ‘হে দয়াল খোদা, হে রহিম রহমান, মোর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় আমারি আপন প্রাণ, তাই নিয়ে প্রভু পুতের প্রাণ কর মোরে প্রতিদান।’স্তব্ধ-নীরব গৃহতল, মুখে নাহি কারো বাণী, গভীর রজনী, সুপ্তি-মগন নিখিল বিশ্বরানী, আকাশে বাতাসে ধ্বনিতেছে যেন গোপন কি কানাকানি।সহসা বাবর ফুকারি উঠির – ‘নাহি ভয় নাহি ভয়’ প্রার্থনা মোর কবুল করেছে আল্লাহ যে দয়াময়, পুত আমার বাঁচিয়া উঠিবে-মরিবে না নিশ্চয়।’ঘুরিতে লাগিল পুলকে বাবর পুত্রের চারিপাশ নিরাশ হৃদয় সে যেন আশার দৃপ্ত জয়োল্লাস, তিমির রাতের তোরণে তোরণে ঊষার পূর্বাভাস।সেইদিন হতে রোগ – লক্ষণ দেখা দিল বাবরের, হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করিল শয্যা সে মরণের, নতুন জীবনে হুমায়ুন ধীরে বাঁচিয়া উঠিল ফের।মরিল বাবর – না, না ভুল কথা, মৃতু্য কে তার কয়? মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়, পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়।আরও পড়ুন… গোলাম মোস্তফার সকল কবিতা 
গোলাম মোস্তফা
ছড়া
আমরা নূতন, আমরা কুঁড়ি, নিখিল বন-নন্দনে, ওষ্ঠে রাঙা হাসির রেখা, জীবন জাগে স্পন্দনে। লক্ষ আশা অন্তরে ঘুমিয়ে আছে মন্তরে ঘুমিয়ে আছে বুকের ভাষা পাঁপড়ি-পাতার বন্ধনে। সাগর-জলে পাল তুলে দে’ কেউ বা হবো নিরুদ্দেশ, কলম্বাসের মতই বা কেউ পৌঁছে যাবো নূতন দেশ। জাগবে সাড়া বিশ্বময় এই বাঙালি নিঃস্ব নয়, জ্ঞান-গরিমা শক্তি সাহস আজও এদের হয়নি শেষ।কেউ বা হবো সেনানায়ক গড়বো নূতন সৈন্যদল, সত্য-ন্যায়ের অস্ত্র ধরি, নাই বা থাকুক অন্য বল। দেশমাতাকে পূজবো গো, ব্যথীর ব্যথা বুঝবো গো, ধন্য হবে দেশের মাটি, ধন্য হবে অন্নজল।ভবিষ্যতের লক্ষ আশা মোদের মাঝে সন্তরে, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে। আকাশ-আলোর আমরা সুত, নূত বাণীর অগ্রদূত, কতই কি যে করবো মোরা-নাইকো তার অন্ত-রে।…
গোলাম মোস্তফা
ছড়া
এই করিনু পণ মোরা এই করিনু পণ ফুলের মতো গড়ব মোরা মোদের এই জীবন। হাসব মোরা সহজ সুখে গন্ধ রবে লুকিয়ে বুকে মোদের কাছে এলে সবার জুড়িয়ে যাবে মন।নদী যেমন দুই কূলে তার বিলিয়ে চলে জল, ফুটিয়ে তোলে সবার তরে শস্য, ফুল ও ফল। তেমনি করে মোরাও সবে পরের ভাল করব ভবে মোদের সেবায় উঠবে হেসে এই ধরণীতল। সূর্য যেমন নিখিল ধরায় করে কিরণ দান, আঁধার দূরে যায় পালিয়ে জাগে পাখির গান। তেমনি মোদের জ্ঞানের আলো দূর করিবে সকল কালো উঠবে জেগে ঘুমিয়ে আছে যে সব নীরব প্রাণ।এই করিনু পণ মোরা এই করিনু পণ ফুলের মতো গড়ব মোরা মোদের এই জীবন। হাসব মোরা সহজ সুখে গন্ধ রবে লুকিয়ে বুকে মোদের কাছে এলে সবার জুড়িয়ে যাবে মন।নদী যেমন দুই কূলে তার বিলিয়ে চলে জল, ফুটিয়ে তোলে সবার তরে শস্য, ফুল ও ফল। তেমনি করে মোরাও সবে পরের ভাল করব ভবে মোদের সেবায় উঠবে হেসে এই ধরণীতল। সূর্য যেমন নিখিল ধরায় করে কিরণ দান, আঁধার দূরে যায় পালিয়ে জাগে পাখির গান। তেমনি মোদের জ্ঞানের আলো দূর করিবে সকল কালো উঠবে জেগে ঘুমিয়ে আছে যে সব নীরব প্রাণ।
উৎপল কুমার বসু
প্রকৃতিমূলক
সুন্দরী আধেকলীনা, তুমি দেহভার কিছু রাখো দুপুরের হলুদ বেলায় কিছু রাখো অন্ধকার জলের গভীর দেশে—- প্রমত্ত আশার লক্ষ ঢেউ মুছে যায় একাকার সাগরে, সকালে,অথচ তোমার কোলে অগ্রন্থির মালা ছেঁড়ে এখনো বাতাস | এখনো দুর্লভ যত সংগ্রহে ভরে আছে পর্বত তোমার | প্রাকৃত জনের মতো আমি ভাবি সহসা নিশ্বাস তোমারই বুকের কাছে বেজেছিল, সহসা মর্মরেদিগন্তের তালবন যেন দূর পূর্ণিমাসন্ধ্যার অন্তরালে তোমাকেও নিয়ে যায় – তুমি নামো আসন্ন জোয়ারে, প্রথম সাগরস্নানে | অতি দীর্ঘ বালুতট শূন্য পড়ে থাকে— যদি না ওদের সম্রাট ফিরে আসে গুপ্তচর, অভিশাপ, যদি না সভ্যতা |সুন্দরী আধেকলীনা, তুমি দেহভার কিছু রাখো দুপুরের হলুদ বেলায় কিছু রাখো অন্ধকার জলের গভীর দেশে—- প্রমত্ত আশার লক্ষ ঢেউ মুছে যায় একাকার সাগরে, সকালে,অথচ তোমার কোলে অগ্রন্থির মালা ছেঁড়ে এখনো বাতাস | এখনো দুর্লভ যত সংগ্রহে ভরে আছে পর্বত তোমার | প্রাকৃত জনের মতো আমি ভাবি সহসা নিশ্বাস তোমারই বুকের কাছে বেজেছিল, সহসা মর্মরেদিগন্তের তালবন যেন দূর পূর্ণিমাসন্ধ্যার অন্তরালে তোমাকেও নিয়ে যায় – তুমি নামো আসন্ন জোয়ারে, প্রথম সাগরস্নানে | অতি দীর্ঘ বালুতট শূন্য পড়ে থাকে— যদি না ওদের সম্রাট ফিরে আসে গুপ্তচর, অভিশাপ, যদি না সভ্যতা |
উৎপল কুমার বসু
প্রকৃতিমূলক
ময়ূর, বুঝি-বা কোনো সূর্যাস্তে জন্মেছ । এবং মেঘের তলে উল্লাসে নতুন ডানাটিকে মেলে ধরে যখন প্রথম খেলা শুরু হবে—- সেই স্থির পরকালে আমি প্রথম তোমার দেখা পেয়েছি, ময়ূর ।সমুদ্রসৈকত ধরে এত দূর, এত গাঢ় স্তব্ধতার কাছে এসে তোমার প্রবল দৌড় দেখা গেল, যেন আরো শব্দহীনতার প্রতি — অন্ধকার ঝাউবনে— অস্তিত্ব-জটিল আমাদের আর্তরবে ডেকেছ সহসাঅথচ বনের শেষে নির্বসন যৌবনের চোখে বিদ্যুত্চমক বলে মনে হল তোমার প্রতিভা মনে হল নবীন নবীনতমা সৃষ্টির ক্ষমতাও বুঝি এইভাবে ক্রমাগত অন্তরহীনতার বুকে মিশে যায় ।ফিরে দাও সাগরে আবার । ফিরে দাও উন্মাদ তুফানে অস্তিত্বকে ফিরে দাও । বিপুল পৃথিবীময় পাথরের বুকে আমি তার ভেঙে পড়া দেখেছি গর্জনে । দেখেছি আছাড় ডুবন্ত জাহাজ থেকে ভেঙে নেয় পাটাতন, জয়ের মাস্তুল ।তবুও ঝড়ের শেষে, তবুও দিনের শেষে, অন্ধকার বনে, বৃষ্টির মেঘের তলে শোনা গেল আর্ত কেকারব— বুঝি নির্জনতা পেয়ে পুনর্বার মেলেছ বিশাল, নক্ষত্রে সাজানো ডানা । পেয়েছ নির্দেশ ?ময়ূর, বুঝি-বা কোনো সূর্যাস্তে জন্মেছ । এবং মেঘের তলে উল্লাসে নতুন ডানাটিকে মেলে ধরে যখন প্রথম খেলা শুরু হবে—- সেই স্থির পরকালে আমি প্রথম তোমার দেখা পেয়েছি, ময়ূর ।সমুদ্রসৈকত ধরে এত দূর, এত গাঢ় স্তব্ধতার কাছে এসে তোমার প্রবল দৌড় দেখা গেল, যেন আরো শব্দহীনতার প্রতি — অন্ধকার ঝাউবনে— অস্তিত্ব-জটিল আমাদের আর্তরবে ডেকেছ সহসাঅথচ বনের শেষে নির্বসন যৌবনের চোখে বিদ্যুত্চমক বলে মনে হল তোমার প্রতিভা মনে হল নবীন নবীনতমা সৃষ্টির ক্ষমতাও বুঝি এইভাবে ক্রমাগত অন্তরহীনতার বুকে মিশে যায় ।ফিরে দাও সাগরে আবার । ফিরে দাও উন্মাদ তুফানে অস্তিত্বকে ফিরে দাও । বিপুল পৃথিবীময় পাথরের বুকে আমি তার ভেঙে পড়া দেখেছি গর্জনে । দেখেছি আছাড় ডুবন্ত জাহাজ থেকে ভেঙে নেয় পাটাতন, জয়ের মাস্তুল ।তবুও ঝড়ের শেষে, তবুও দিনের শেষে, অন্ধকার বনে, বৃষ্টির মেঘের তলে শোনা গেল আর্ত কেকারব— বুঝি নির্জনতা পেয়ে পুনর্বার মেলেছ বিশাল, নক্ষত্রে সাজানো ডানা । পেয়েছ নির্দেশ ?
উৎপল কুমার বসু
রূপক
রাজার মতো রাজা। ভিনগ্রামেতে চলে গেলেন। কালোমহিষ বাহন। পরনে সেই পরিচ্ছদ যা আমরা জন্মকালে পরে থাকি।মস্ত বড়ো চাষের ঢালু জমি। অন্যদিকে নীল পাহাড়, বাদাম ক্ষেত-রাজ্যে তার। একটি নদী, কয়েক ঘর প্রজা এবং আত্মজন।সন্ধেবেলা বুনোশুয়োর আগুনে ঝলসায়। রাজা প্রকাণ্ড এই মহাদেশের গল্প বলেন। এবং কোন স্রোতস্বতী পেরিয়ে গেলে প্রতি মানুষ আকাশে যত নতুন তারা ওঠে–দিন-ফুরানো কাঠের সাঁকো নানান লোকে ভারী। রাজার মতো রাজা। কালোমহিষ এ-পারে রেখে ঐ পারেতে গেলেন।রাজার মতো রাজা। ভিনগ্রামেতে চলে গেলেন। কালোমহিষ বাহন। পরনে সেই পরিচ্ছদ যা আমরা জন্মকালে পরে থাকি।মস্ত বড়ো চাষের ঢালু জমি। অন্যদিকে নীল পাহাড়, বাদাম ক্ষেত-রাজ্যে তার। একটি নদী, কয়েক ঘর প্রজা এবং আত্মজন।সন্ধেবেলা বুনোশুয়োর আগুনে ঝলসায়। রাজা প্রকাণ্ড এই মহাদেশের গল্প বলেন। এবং কোন স্রোতস্বতী পেরিয়ে গেলে প্রতি মানুষ আকাশে যত নতুন তারা ওঠে–দিন-ফুরানো কাঠের সাঁকো নানান লোকে ভারী। রাজার মতো রাজা। কালোমহিষ এ-পারে রেখে ঐ পারেতে গেলেন।
উৎপল কুমার বসু
প্রকৃতিমূলক
বাতাস শাসন করে ঢেউগুলি । অনন্ত প্রাকার শুষ্ক তৃণে, ঝাউশাখে । নগর পিছনে ফেলে চলে আসে সহস্র ভিখারি, অন্ধ লোল ভিখারিনী, ভিক্ষাদাতা ইত্যাদির সার কেননা ওষ্ঠে দুই করতল স্ফীত করে হাঁক দেয় মুক্তার শিকারি যেখানে জলের রেখা ধাপে ধাপে দিগন্তে ছড়ায় যেখানে সৈকত জুড়ে উড়ে চলে ছায়াপত্ররাশি আমার হোটেল থেকে দেখা গেল — যতখানি তোমাকে দেখায় কিছু কি গোপন রাখো ? কোনো প্রেমবৈষম্যের হাসি ?প্রতি ধর্ম বলে দেয় : আমি চাই অসম্পূর্ণ পাঠ । ঐ মতো মুক্তা বলে । জলের প্লাবনে তব মুক্তার শিকার । তরঙ্গে নেমেই আজ বোঝা গেল সমুদ্রকপাটআরো দূরে । যেখানে জলের রঙ লৌহমরিচার শিকলের মতো লাল । ভিখারির দলে মিশে আমি কি শুনি নি জলের গভীরে রুদ্ধ শৃঙ্খলের ধ্বনি ?*রাত্রির জোয়ার লেগে নুয়ে পড়ে সৈতকতৃণ এখন রেখেছি মদ নৃত্যপর মদের গেলাসে উঠেছি নক্ষত্রহীন গম্বুজে ও সমুদ্রবাতাসে দূর হতে দেখা যায় অপসর হেমন্তের দিনওতোমাকে অনেক কথা বলা হল । কিছু নেই বাকি । হেমন্তের দিনে আর ফাঁক নেই । পাতা হতে পাতার তরল উচ্ছ্বাস ধাবিত দেখে, হে জীবপালিনি, ঐ অনন্ত শীতল বাহুবন্ধে ছিঁড়ে পড়ে দেখেছি একাকীচূর্ণ সবিতার দিন ক্রমাগত দূরে সরে যায় । যেখানে সৈকততৃণ অর্ধেক আলোকগ্রস্ত অর্ধেক ঢাকা যেখানে রূপোয়-গড়া সুবর্ণের, তরঙ্গের অতীন্দ্রীয় চাকাআগুন উড়ায় দ্রুত । মৌমাছি কি গতিদিব্যতায় আবার বসন্তদিনে খুলে ফ্যালে রান্নার হাঁড়ি । যখন প্রস্তুত সব, ধোঁয়া ওঠে, ক্ষুধা, কাড়াকাড়ি ।*লাল টালি .  .  .  .শাদা বাড়ি ঢেউ ওঠে . . . .ঢেউ পড়ো পড়ো শাদা বালি . . . .শাদা বাড়ি দুপুরের আলো . . . .ধূ ধূ সূর্যের আলো শাদা সূর্য ও বালি . . . .শাদা ফেনা ও ফেনার টানে ঢেউ পড়ো পড়ো . . . .জাগে বালিয়াড়ি জ্বলে লাল টালি . . . .তোমাদের বাড়ি । বাতাস শাসন করে ঢেউগুলি । অনন্ত প্রাকার শুষ্ক তৃণে, ঝাউশাখে । নগর পিছনে ফেলে চলে আসে সহস্র ভিখারি, অন্ধ লোল ভিখারিনী, ভিক্ষাদাতা ইত্যাদির সার কেননা ওষ্ঠে দুই করতল স্ফীত করে হাঁক দেয় মুক্তার শিকারি যেখানে জলের রেখা ধাপে ধাপে দিগন্তে ছড়ায় যেখানে সৈকত জুড়ে উড়ে চলে ছায়াপত্ররাশি আমার হোটেল থেকে দেখা গেল — যতখানি তোমাকে দেখায় কিছু কি গোপন রাখো ? কোনো প্রেমবৈষম্যের হাসি ?প্রতি ধর্ম বলে দেয় : আমি চাই অসম্পূর্ণ পাঠ । ঐ মতো মুক্তা বলে । জলের প্লাবনে তব মুক্তার শিকার । তরঙ্গে নেমেই আজ বোঝা গেল সমুদ্রকপাটআরো দূরে । যেখানে জলের রঙ লৌহমরিচার শিকলের মতো লাল । ভিখারির দলে মিশে আমি কি শুনি নি জলের গভীরে রুদ্ধ শৃঙ্খলের ধ্বনি ?*রাত্রির জোয়ার লেগে নুয়ে পড়ে সৈতকতৃণ এখন রেখেছি মদ নৃত্যপর মদের গেলাসে উঠেছি নক্ষত্রহীন গম্বুজে ও সমুদ্রবাতাসে দূর হতে দেখা যায় অপসর হেমন্তের দিনওতোমাকে অনেক কথা বলা হল । কিছু নেই বাকি । হেমন্তের দিনে আর ফাঁক নেই । পাতা হতে পাতার তরল উচ্ছ্বাস ধাবিত দেখে, হে জীবপালিনি, ঐ অনন্ত শীতল বাহুবন্ধে ছিঁড়ে পড়ে দেখেছি একাকীচূর্ণ সবিতার দিন ক্রমাগত দূরে সরে যায় । যেখানে সৈকততৃণ অর্ধেক আলোকগ্রস্ত অর্ধেক ঢাকা যেখানে রূপোয়-গড়া সুবর্ণের, তরঙ্গের অতীন্দ্রীয় চাকাআগুন উড়ায় দ্রুত । মৌমাছি কি গতিদিব্যতায় আবার বসন্তদিনে খুলে ফ্যালে রান্নার হাঁড়ি । যখন প্রস্তুত সব, ধোঁয়া ওঠে, ক্ষুধা, কাড়াকাড়ি ।*লাল টালি .  .  .  .শাদা বাড়ি ঢেউ ওঠে . . . .ঢেউ পড়ো পড়ো শাদা বালি . . . .শাদা বাড়ি দুপুরের আলো . . . .ধূ ধূ সূর্যের আলো শাদা সূর্য ও বালি . . . .শাদা ফেনা ও ফেনার টানে ঢেউ পড়ো পড়ো . . . .জাগে বালিয়াড়ি জ্বলে লাল টালি . . . .তোমাদের বাড়ি ।
উৎপল কুমার বসু
চিন্তামূলক
১নিঃসঙ্গ দাঁড়ের শব্দে চলে যায় তিনটি তরণী |শিরিষের রাজ্য ছিল কূলে কূলে অপ্রতিহত যেদিন অস্ফুট শব্দে তারা যাবে দূর লোকালয়ে আমি পাবো অনুপম, জনহীন, উর্বর মৃত্তিকাতখন অদেখা ঋতু বলে দেবে এই সংসার দুঃখ বয় কৃষকের | যদিও সফল প্রতিটি মানুষ জানে তন্দ্রাহীনতায় কেন বা এসেছো সব নিষ্ফলতা, কবিতা তুমিও,নাহয় দীর্ঘ দিন কেটেছিল তোমার অপ্রেমে—তবুও ফোটে না ফুল | বুঝি সূর্য যথেষ্ট উজ্জ্বল নয় | বুঝি চিরজাগরূক আকাশশিখরে আমি ধাতুফলকের শব্দ শুনে—- সূর্যের ঘড়ির দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছিএখনি বিমুক্ত হবে মেঘে মেঘে বসন্ত-আলোর নির্ভার কৃপাকণা | সমস্তই ঝরেছিল — ঝরে যাবে— যদি না আমার যদি না আমার মৃত্যু ফুটে থাকা অসংখ্য কাঁটায় |২আসলে মৃত্যুও নয় প্রাকৃতিক, দৈব অনুরোধ | যাদের সঙ্কেতে আমি যথাযথ সব কাজ ফেলে যাবো দূর শূন্যপথে—- তারা কেমন বান্ধব বলো কোন্ ঘড়ি ? কোন্ সূর্যরথ ?হয়ত প্রকৃত ঐ নগ্ন জলধারা—- যখন দুপুর কাঁপে গ্রীষ্মের নতুন সাবানে | ওদের দেবতা বলে আমি মানি | ওদের ঘড়ির সমস্ত খঞ্জনপাখা লক্ষবার শোনায় অস্ফুটে—- আমার বন্ধু কি তুমি ? আমি কি তোমার ?কেন যে এখনো নই প্রাকৃতিক দুঃখজটাজাল ? আমার নিয়তি তুমি ঈর্যা করো—- আমার স্মরণে যাও দূর তীর্থপথে, ভুল পথে — রক্তিম কাঁটায় নিজেকে বিক্ষত করো | রোমিও — রোমিও —কেন শূন্যে মেঘলীন কম্পিত চাদর উড়ে গেলে—- অনির্বাণ, স্থির নাটকের যারা ছিল চারিত্রিক, নেপথ্যে কুশল, প্রেম চেয়েছিল, দুঃখ, তারা একে একে অম্লান ঝরে যায় ?তবে কি আমিও নই তেমন প্রেমিকা ?৩বহুদিন ছুঁয়ে যায় বর্তুল, বিস্মৃত পৃথিবী লাটিম সূর্যের তাপে নানা দেশ—বিপুল শূন্যতা— সে যেন বিচিত্র আলো দিয়েছিল আমার ঘরের গবাক্ষবিহীন কোনো অন্ধকারে— একদিন —শুধু একদিন |তখন, প্রবল মুহূর্তে আমি জেনেছি অনেক— সমুদ্র কেমন হয় | কাকে বলে দুর্নিরীক্ষ্য তরু | আমি কেন রুগ্ন হই | তুমি দূর স্খলিত তারার কেন বা সমাধি গড়ো বনে বনে |অথচ আঁধারে ফিরি আমি ক্লান্ত প্রদর্শক আলো, যারা আসে সহচর রক্ত-লাল, গমের সবুজ, তারা কেউ ধূর্ত নয়—দয়াশীল, বিনীত ভাষায় বলে, ‘তুমি ভুলে যাও সমস্ত জ্ঞানের ভার— সমস্ত অক্ষর |’৪এখনি বৃষ্টির পর আমি পাবো জ্যোত্স্না-ভালোবাসা | কেননা মেনেছি আমি শোকাকুল তুমিও বন্দিনী অজেয় শকটে তার | কোনো কোনো রথ একা যায় ভ্রান্ত পথে—- অন্ধকারে —চালকবিহীন—যেখানে সুদীর্ঘ রাত ওড়ে নীল গন্ধের রুমালে যেখানে জলের মতো পরিসর, অফুরন্ত বায়ু ধুয়ে দেয় বনস্থলী, বালুতট—-দীর্ণ হাহাকারতুলেছিলে শূন্যতায় পাহাড়ের উর্বর মৃত্তিকা, তুমি দুঃখ, তুমি প্রেম, শোনেনি সতর্কবাণী | যেন স্রোত সহসা পাথরে রুদ্ধ হল | এবং স্খলিত বহু রথ, পদাতিক দেখে আমি মেনেছি এখনপ্রতিটি বৃষ্টির পর ছিন্ন হও তুমি, ভালোবাসা |৫পৃথিবীর সব তরু প্রতিচ্ছায়া খুলে দেয় বসন্তের দিনে | যখনি তোমাকে ডাকে ‘এসো এসো বিদেহ কলুষ’, কেন যে লুন্ঠিত, নীল পরিধান খুলে তুমি বালিকার স্পষ্টতায় কাঁদো—- বসন্তই জানে |তবুও আমার স্বপ্ন দুপুরের —-ঘুমন্ত রাতের — প্রবল নদীর জলে ধরে রাখে নীল যবনিকা—- সে তোমার পরিচ্ছদ, অন্তরাল, হয়ত বা যেটুকু রহস্য আমি ভালোবাসি বালিকা কিশোর শরীরে —এখন বিনিদ্র রাতে পুড়ে যায় সব মোমবাতি ! এবং অলেখা গান নিষ্ফলতা বয়েছিল কত দীর্ঘ দিন সে নয় প্রেমের দুঃখ ? তবু সতর্কতা ভেঙে ফেলে সুন্দরের প্রিয় পুষ্পাধার বলেছিল, ‘এই প্রেম অন্তিমের, সমস্ত ফুলের’৬ যেন দূর অদেখা বিদ্যুতে তুমি পুড়ে যাও তুমি সুন্দর নিয়তি যেন জল, ঝোড়ো রাতে জ্বলে একা বজ্রাহত তরু তুমি সুন্দর নিয়তি মৃতেরা নিষ্পাপ থাকে | কারো নামে অচ্ছোদসরসী— তুমি বিরূপ নিয়তি রাখো দূর মেঘপটে যত ক্রোধ, অকাম কামনা তুমি সুন্দর নিয়তি ফিরে দাও দীর্ঘ ঝড় মদিরায় প্রাচীন কুঞ্জের তুমি সুন্দর নিয়তি। ১নিঃসঙ্গ দাঁড়ের শব্দে চলে যায় তিনটি তরণী |শিরিষের রাজ্য ছিল কূলে কূলে অপ্রতিহত যেদিন অস্ফুট শব্দে তারা যাবে দূর লোকালয়ে আমি পাবো অনুপম, জনহীন, উর্বর মৃত্তিকাতখন অদেখা ঋতু বলে দেবে এই সংসার দুঃখ বয় কৃষকের | যদিও সফল প্রতিটি মানুষ জানে তন্দ্রাহীনতায় কেন বা এসেছো সব নিষ্ফলতা, কবিতা তুমিও,নাহয় দীর্ঘ দিন কেটেছিল তোমার অপ্রেমে—তবুও ফোটে না ফুল | বুঝি সূর্য যথেষ্ট উজ্জ্বল নয় | বুঝি চিরজাগরূক আকাশশিখরে আমি ধাতুফলকের শব্দ শুনে—- সূর্যের ঘড়ির দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছিএখনি বিমুক্ত হবে মেঘে মেঘে বসন্ত-আলোর নির্ভার কৃপাকণা | সমস্তই ঝরেছিল — ঝরে যাবে— যদি না আমার যদি না আমার মৃত্যু ফুটে থাকা অসংখ্য কাঁটায় |২আসলে মৃত্যুও নয় প্রাকৃতিক, দৈব অনুরোধ | যাদের সঙ্কেতে আমি যথাযথ সব কাজ ফেলে যাবো দূর শূন্যপথে—- তারা কেমন বান্ধব বলো কোন্ ঘড়ি ? কোন্ সূর্যরথ ?হয়ত প্রকৃত ঐ নগ্ন জলধারা—- যখন দুপুর কাঁপে গ্রীষ্মের নতুন সাবানে | ওদের দেবতা বলে আমি মানি | ওদের ঘড়ির সমস্ত খঞ্জনপাখা লক্ষবার শোনায় অস্ফুটে—- আমার বন্ধু কি তুমি ? আমি কি তোমার ?কেন যে এখনো নই প্রাকৃতিক দুঃখজটাজাল ? আমার নিয়তি তুমি ঈর্যা করো—- আমার স্মরণে যাও দূর তীর্থপথে, ভুল পথে — রক্তিম কাঁটায় নিজেকে বিক্ষত করো | রোমিও — রোমিও —কেন শূন্যে মেঘলীন কম্পিত চাদর উড়ে গেলে—- অনির্বাণ, স্থির নাটকের যারা ছিল চারিত্রিক, নেপথ্যে কুশল, প্রেম চেয়েছিল, দুঃখ, তারা একে একে অম্লান ঝরে যায় ?তবে কি আমিও নই তেমন প্রেমিকা ?৩বহুদিন ছুঁয়ে যায় বর্তুল, বিস্মৃত পৃথিবী লাটিম সূর্যের তাপে নানা দেশ—বিপুল শূন্যতা— সে যেন বিচিত্র আলো দিয়েছিল আমার ঘরের গবাক্ষবিহীন কোনো অন্ধকারে— একদিন —শুধু একদিন |তখন, প্রবল মুহূর্তে আমি জেনেছি অনেক— সমুদ্র কেমন হয় | কাকে বলে দুর্নিরীক্ষ্য তরু | আমি কেন রুগ্ন হই | তুমি দূর স্খলিত তারার কেন বা সমাধি গড়ো বনে বনে |অথচ আঁধারে ফিরি আমি ক্লান্ত প্রদর্শক আলো, যারা আসে সহচর রক্ত-লাল, গমের সবুজ, তারা কেউ ধূর্ত নয়—দয়াশীল, বিনীত ভাষায় বলে, ‘তুমি ভুলে যাও সমস্ত জ্ঞানের ভার— সমস্ত অক্ষর |’৪এখনি বৃষ্টির পর আমি পাবো জ্যোত্স্না-ভালোবাসা | কেননা মেনেছি আমি শোকাকুল তুমিও বন্দিনী অজেয় শকটে তার | কোনো কোনো রথ একা যায় ভ্রান্ত পথে—- অন্ধকারে —চালকবিহীন—যেখানে সুদীর্ঘ রাত ওড়ে নীল গন্ধের রুমালে যেখানে জলের মতো পরিসর, অফুরন্ত বায়ু ধুয়ে দেয় বনস্থলী, বালুতট—-দীর্ণ হাহাকারতুলেছিলে শূন্যতায় পাহাড়ের উর্বর মৃত্তিকা, তুমি দুঃখ, তুমি প্রেম, শোনেনি সতর্কবাণী | যেন স্রোত সহসা পাথরে রুদ্ধ হল | এবং স্খলিত বহু রথ, পদাতিক দেখে আমি মেনেছি এখনপ্রতিটি বৃষ্টির পর ছিন্ন হও তুমি, ভালোবাসা |৫পৃথিবীর সব তরু প্রতিচ্ছায়া খুলে দেয় বসন্তের দিনে | যখনি তোমাকে ডাকে ‘এসো এসো বিদেহ কলুষ’, কেন যে লুন্ঠিত, নীল পরিধান খুলে তুমি বালিকার স্পষ্টতায় কাঁদো—- বসন্তই জানে |তবুও আমার স্বপ্ন দুপুরের —-ঘুমন্ত রাতের — প্রবল নদীর জলে ধরে রাখে নীল যবনিকা—- সে তোমার পরিচ্ছদ, অন্তরাল, হয়ত বা যেটুকু রহস্য আমি ভালোবাসি বালিকা কিশোর শরীরে —এখন বিনিদ্র রাতে পুড়ে যায় সব মোমবাতি ! এবং অলেখা গান নিষ্ফলতা বয়েছিল কত দীর্ঘ দিন সে নয় প্রেমের দুঃখ ? তবু সতর্কতা ভেঙে ফেলে সুন্দরের প্রিয় পুষ্পাধার বলেছিল, ‘এই প্রেম অন্তিমের, সমস্ত ফুলের’৬ যেন দূর অদেখা বিদ্যুতে তুমি পুড়ে যাও তুমি সুন্দর নিয়তি যেন জল, ঝোড়ো রাতে জ্বলে একা বজ্রাহত তরু তুমি সুন্দর নিয়তি মৃতেরা নিষ্পাপ থাকে | কারো নামে অচ্ছোদসরসী— তুমি বিরূপ নিয়তি রাখো দূর মেঘপটে যত ক্রোধ, অকাম কামনা তুমি সুন্দর নিয়তি ফিরে দাও দীর্ঘ ঝড় মদিরায় প্রাচীন কুঞ্জের তুমি সুন্দর নিয়তি।
উৎপল কুমার বসু
প্রেমমূলক
দয়িতা, তোমার প্রেম আমাদের সাক্ষ্য মানে নাকি? সূর্য-ডোবা শেষ হল কেননা সূর্যের যাত্রা বহুদূর। নক্ষত্র ফোটার আগে আমি একা মৃত্তিকার পরিত্যক্ত,বাকি আঙুর, ফলের ঘ্রাণ, গম, যব, তরল মধু-র রৌদ্রসমুজ্জল স্নান শেষ করি। এখন আকাশতলে সিন্ধুসমাজের ভাঙা উতরোল স্বর শোনা যায় গুঞ্জনের মতো- দয়িতা, তোমার প্রেম অন্ধকারে শুধু প্রবাসের আরেক সমাজযাত্রা। আমাদেরই বাহুবল বিচূর্ণ, আহত সেই সব সাক্ষ্যগুলি জেগে ওঠে। মনে হল প্রতিশ্রুত দিন হতে ক্রমাগত, ধীরে ধীরে, গোধুলিনির্ভর সূর্যের যাত্রার পথ। তবু কেন ষোলো অথবা সতের-এই খেতের উৎসব শেষে, ফল হাতে, শস্যের বাজারে আমাদের ডেকেছিলে সাক্ষ্য দিতে? তুমুল, সত্বর, পরস্পরাহীন সাক্ষ্য সমাপন হতে হতে ক্রমান্বয়ে বাড়ে।
উৎপল কুমার বসু
প্রেমমূলক
১মন মানে না বৃষ্টি হলো এত সমস্ত রাত ডুবো-নদীর পারে আমি তোমার স্বপ্নে-পাওয়া আঙুল স্পর্শ করি জলের অধিকারে |এখন এক ঢেউ দোলানো ফুলে ভাবনাহীন বৃত্ত ঘিরে রাখে— স্রোতের মতো স্রোতস্বিনী তুমি যা-কিছু টানো প্রবল দুর্বিপাকেতাদের জয় শঙ্কাহীন এত, মন মানে না সহজ কোনো জলে চিরদিনের নদী চলুক, পাখি | একটি নৌকো পারাপারের ছলেস্পর্শ করে অন্য নানা ফুল অন্য দেশ, অন্য কোনো রাজার, তোমার গ্রামে, রেলব্রিজের তলে, ভোরবেলার রৌদ্রে বসে বাজার |২সেদিন ঝড়ের রাতে তুমি চাঁদ ডুবন্ত, একাকী দেখেছিলে লক্ষ ঢেউ জলে ভাঙে প্রতিচ্ছায়া — মেঘজটাজাল খুলে যায় অন্যমনে | এত অলৌকিক অন্ধকার ঘিরেছিল চতুর্দিকে, এত অলৌকিক বাতাসে মত্ততা যেন বলে গেল ‘কে খোলে কপাট ? কে যায় বনের যাত্রী— ঝটিকায় তুমি কোথাকার |’ আমি তখন নির্বাক থাকি | চন্দ্রাহত—- তোমার পূর্ণিমা কখন দিগন্তে ডোবে আমি ততদিনে স্পষ্ট জেনে গেছি |৩এখনি যাবে কি তুমি ফিরে এল বৃষ্টি দুপুরের মাঠের ওপার থেকে, দু’টি শান্ত গৃহকোণে কিছু জল দিয়ে— উত্তরে, ধানের ক্ষেতে, যেখানে অদেখা গতরাত্রির সব ভালোবাসাবাসি— জলে মিশে আছে | যেখানেই থাকো তুমি একটি পথের রেখা ধ্রুব, কূট, নিশ্চিত শ্রাবণে তোমাকে সহজ কোনো আলে আলে নিয়ে যায়, যখন সহসা দুধারে চঞ্চল স্রোত, জল, নদী, কম্পিত ডাহুক, একটি মুহূর্তে শুধু তুলে নেয় প্রতিচ্ছবি, তোমার ভঙ্গিমা— আবার সহজে ভাঙে— যেন খেলা কেবলই মেঘের প্লাবিত ধানের ক্ষেতে বারবার বৃষ্টি দিয়ে যাওয়া – যেন মত্ত কখনো আঙুল অন্যের করতলে বিঁধেছিল—- অন্য করতলরাখে না প্রেমের ভার, সে প্রাচীন, সে চিরন্তন ! অথচ বর্ষা আসে | আদিগন্ত একাকী মাঠের দৈর্ঘ্য কত— ভয় কত—-এখনি যাবে কি তুমি ?৪অমন কালো মেঘের দিনে জন্মেছিলেন আমার প্রিয় কবি | অন্য সকল দিনের মত বৃষ্টি নামল— রোদ উঠল কত উনি আমায় রক্তে লীন দেবায়তন দেখিয়েছিলেন |যদিও ঐ সিংহাসনে কুয়াশাময় সম্রাটের অস্থিরতা ছিল, তবু আমি ক্ষমাই চেয়েছিলাম— যা আমাকে ধন্য করে, প্রিয় কবিকে, মহিষটিকে |নিষ্করুণ মাতাল হাতে ছড়িয়ে থাকা শত বধ্যভূমি | ভীষণ শব্দে বেজে উঠল মহিষটির দীপ্ত গলা ‘ক্ষমা করুন’, ‘ক্ষমা করুন’ আমি শান্ত, অনুচ্চারিত শব্দে বলেছিলাম |১মন মানে না বৃষ্টি হলো এত সমস্ত রাত ডুবো-নদীর পারে আমি তোমার স্বপ্নে-পাওয়া আঙুল স্পর্শ করি জলের অধিকারে |এখন এক ঢেউ দোলানো ফুলে ভাবনাহীন বৃত্ত ঘিরে রাখে— স্রোতের মতো স্রোতস্বিনী তুমি যা-কিছু টানো প্রবল দুর্বিপাকেতাদের জয় শঙ্কাহীন এত, মন মানে না সহজ কোনো জলে চিরদিনের নদী চলুক, পাখি | একটি নৌকো পারাপারের ছলেস্পর্শ করে অন্য নানা ফুল অন্য দেশ, অন্য কোনো রাজার, তোমার গ্রামে, রেলব্রিজের তলে, ভোরবেলার রৌদ্রে বসে বাজার |২সেদিন ঝড়ের রাতে তুমি চাঁদ ডুবন্ত, একাকী দেখেছিলে লক্ষ ঢেউ জলে ভাঙে প্রতিচ্ছায়া — মেঘজটাজাল খুলে যায় অন্যমনে | এত অলৌকিক অন্ধকার ঘিরেছিল চতুর্দিকে, এত অলৌকিক বাতাসে মত্ততা যেন বলে গেল ‘কে খোলে কপাট ? কে যায় বনের যাত্রী— ঝটিকায় তুমি কোথাকার |’ আমি তখন নির্বাক থাকি | চন্দ্রাহত—- তোমার পূর্ণিমা কখন দিগন্তে ডোবে আমি ততদিনে স্পষ্ট জেনে গেছি |৩এখনি যাবে কি তুমি ফিরে এল বৃষ্টি দুপুরের মাঠের ওপার থেকে, দু’টি শান্ত গৃহকোণে কিছু জল দিয়ে— উত্তরে, ধানের ক্ষেতে, যেখানে অদেখা গতরাত্রির সব ভালোবাসাবাসি— জলে মিশে আছে | যেখানেই থাকো তুমি একটি পথের রেখা ধ্রুব, কূট, নিশ্চিত শ্রাবণে তোমাকে সহজ কোনো আলে আলে নিয়ে যায়, যখন সহসা দুধারে চঞ্চল স্রোত, জল, নদী, কম্পিত ডাহুক, একটি মুহূর্তে শুধু তুলে নেয় প্রতিচ্ছবি, তোমার ভঙ্গিমা— আবার সহজে ভাঙে— যেন খেলা কেবলই মেঘের প্লাবিত ধানের ক্ষেতে বারবার বৃষ্টি দিয়ে যাওয়া – যেন মত্ত কখনো আঙুল অন্যের করতলে বিঁধেছিল—- অন্য করতলরাখে না প্রেমের ভার, সে প্রাচীন, সে চিরন্তন ! অথচ বর্ষা আসে | আদিগন্ত একাকী মাঠের দৈর্ঘ্য কত— ভয় কত—-এখনি যাবে কি তুমি ?৪অমন কালো মেঘের দিনে জন্মেছিলেন আমার প্রিয় কবি | অন্য সকল দিনের মত বৃষ্টি নামল— রোদ উঠল কত উনি আমায় রক্তে লীন দেবায়তন দেখিয়েছিলেন |যদিও ঐ সিংহাসনে কুয়াশাময় সম্রাটের অস্থিরতা ছিল, তবু আমি ক্ষমাই চেয়েছিলাম— যা আমাকে ধন্য করে, প্রিয় কবিকে, মহিষটিকে |নিষ্করুণ মাতাল হাতে ছড়িয়ে থাকা শত বধ্যভূমি | ভীষণ শব্দে বেজে উঠল মহিষটির দীপ্ত গলা ‘ক্ষমা করুন’, ‘ক্ষমা করুন’ আমি শান্ত, অনুচ্চারিত শব্দে বলেছিলাম |
উৎপল কুমার বসু
প্রকৃতিমূলক
হে সূর্য, ককুদবৃষ, সাবলীল সোনার গাছের প্রচ্ছায়ায়, অন্ধকারে সমস্ত তৃণের রোমে একই সঙ্গে ক্ষুধা ও চুম্বন রেখেছ স্তম্ভিত করে । হে সূর্য, উদ্ভিন্ন বাহু, তুমি পরাঙ্মুখ আমাকে দাওনি ধান, গোলাঘর, বীজের উথ্বান আমাকে দাও নি সার, বৃষ্টিজল, কূপের বিন্যাস আমাকে দাও নি শেষ জলসিঞ্চনের মতো জননীপ্রতিভা ওখানে দিনের শেষে অপরাহ্নের ফুল ঝরে যায় দ্রুত । ওখানে প্রার্থনারত কঙ্কালের বাহুবদ্ধ ছায়া খুলে ফ্যালে একে একে কৌতূহলহীন ত্বক, মাংসের জটিল উপশিরাগ্রস্ত পাতা । একে একে অরণ্যের গাছ মরে যায় । কেননা দিগন্তে তুমি কীর্ণ হয়ে উঠে এলে এইমাত্র --- কেননা সোনার গাছ গ্রাস করে বেড়ে ওঠে---- বেড়ে ওঠে উন্মাদ হাওয়ায় অন্য সব ফুল, ফল, জীবের বিজ্ঞান সাম্যতার, প্রতিসাম্যতার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে এখনো ডুমুর গাছে পৌষের লিপ্ত কুয়াশায় মরা পালকের পুঞ্জে শুয়ে আছে পাখি---- মাটির গর্ভ খুঁড়ে আমরা অর্জন করি লোহার আকর এত লোহা কাদের মঙ্গলে পরস্পর প্রতিবন্ধে গড়ে তোলে এঞ্জিন, স্তব্ধ রেল, সাঁকো, বাড়ি, কলোনি, বাজার ------ ক্ষীরের আর্শি থেকে স্বাস্থ্য ভিক্ষা করেছিল যক্ষ্মা-রোগিনীরা ফলের আর্শি থেকে একবাটি স্বচ্ছন্দ রসের ফেনায়, তারল্যে, প্রেমে ডুবে যেতে চেয়েছিল দিল্লীর বাসিন্দা দুধের আর্শি থেকে মৃত্যুপথগামী ওরা চেয়েছিল দীর্ঘ পরমায়ু হে সূর্য, নাক্ষত্রতন্তু ছিঁড়ে তুমি বারবার ক্ষীরে, ফলে, দুধের প্রবাহে পৌষে, শীতের রাতে, মাংসে, ত্বকে, উচ্ছ্বসিত রোমে একই সঙ্গে হাহাকার, করতালি, ইন্দ্রিয়ের বাঁশি কুকুরের দীর্ণ ডাক, ভাঙা ঘন্টা, জলের গর্জন সোনার গাছের তলে উত্সারিত করে দিলে --- সোনার গাছের তলে এই কি চুম্বন? কুয়াশার রাজহংসের ফৌজ দৌড়ে চলে যায়। হায় সূর্য, তোমাকেও আবিষ্কার তৎক্ষণাৎ পূর্বঘাটে, বঙ্গোপসাগরেরজলে, সিন্ধুর আপ্ত-তরঙ্গের ‘পরে অশ্বারূঢ় ম্লান অক্ষৌহিণী ---- তোমাকেও আবিষ্কার তৎক্ষণাৎ কাঞ্চীকাবেরীর জঙ্গলের মর্ম ছিঁড়ে চন্দনবনের করাতকলের পাশে, তোমাকেও আবিষ্কার তৎক্ষণাৎ গতরজনীর আলেয়ায়, খাজুরাহে নৈকষ্যকুলীন, শূদ্র, ব্রাহ্মণের শোভাযাত্রাময় ঐ ভাঙা স্তম্ভে, মিথুনবিপ্লবে --- হিমালয়ে, ডালহৌসী পাহাড়ে এক চিঠির অক্ষরে, বস্তুত, ধূলির খেলা ফেলে দিয়ে আমি বারবার অন্য সকলের মতো ধ্রুব তত্ত্বে, আত্মজিজ্ঞাসায় ফিরে যেতে চেয়েছি যৌবনে তবু আত্মরতিহীন কোন্ সৌরময়দানে আধিপত্য মানুষের? তবু ব্যথাহীন কোন্ বিচ্ছেদের নীল? কোন্ মৃত্যু ঔদাসীন্যহান? এতগুলি বিপরীত প্রতিদ্বন্দ্বী বোধ, ইচ্ছা, পরস্পর সারে সারে মাথার এ-পাশ থেকে ঐ পাশে উড়ে চলে যায়--- জ্যোত্স্নায় এখনি উত্সব শুরু হবে। কেননা সমস্ত হাঁস যুদ্ধের সন্তান। কেননা উত্সব এক জাগতিক, বাঁকা উপত্যকা চাঁদের প্লাবন, শিরা, রক্ত, বুদ্ধি, তীব্রতা ডিমের ফুল-ফোটানোর আগে। এতগুলি বিপরীত, প্রতিদ্বন্দ্বী উচ্চকিত থালা । সহসা ঘোরাও তুমি যুদ্ধে, জন্মে, যোনির শিখরে ; কেননা জন্মও তত কষ্টকর--- বিচ্ছেদের মতো । রক্তপাত ভয়ঙ্কর ততখানি গম্বুজের ভাঙা দেয়ালের মতো । স্বাধীনতা ! অকস্মাৎ তোমাকেও মনে হয় নির্নিমেষ করুণ অঙ্গার সভ্যতার নাভির ভিতরে--- ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আছো, ক্রেমলিনে, যুক্তরাষ্ট্রে হয়তো বা বৈকুন্ঠের যৌনমখমলে, হিন্দুর জিজ্ঞাসা নয় । শুধু কিছু ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কেবলই মঙ্গল করো । তুমি আপেক্ষিক অন্য সকলের প্রতি ---- যেহেতু বিভেদ ‘আন্তর্জাতিক’ বলে উদ্যত মুষল----যেহেতু মানুষ রেডিোর মতো এক অর্বাচীন বক্তার সম্মানে পরিবারসহ শ্রোতা । যেহেতু কাগজে নিত্যই সম্পাদক ছাপার কলের সঙ্গে কী ভাবে সঙ্গম করে--- তারই বিবরণ ধুরন্ধর লিখেছে বিশদ স্বাধীনতা ! তোমাকেই দেখা হল বংশপরম্পরা নির্মল বীজের থেকে ক্রমাগত পূর্ণ মহিলায় কেবলই উঠেছে জেগে --- কূট পাণ্ডুলিপি থেকে বাত্স্যায়নের স্বপ্নদূতীর মতো, নিতম্বের বিপুল আঘাতে ঠেলে ফেলে দাও দূরে পূর্বএশিয়ার চুক্তি পশ্চিমের সাথে আমাকেও খদ্যোৎ হিন্দুর মতো উড়ে যেতে বলো কালো নাভির ভিতরে যেখানে অঙ্গার হে সত্তা, হেমন্তলীন, পাতার ঔরসে নির্বেদ শূন্যতায় ঝরে যাওয়া ত্যক্ত বিপুলতা, পাটল খড়ের স্তূপ, অপরাহ্ন হতে টানা মেদুর কম্বল, হে সত্তা, কুয়াশালীন, খিন্ন প্রাণীর মর্মে পৌঁছে দাও ভাষা--- উদ্বেল আখের বনে, বার্লিক্ষেতে, যবের কিনারে, তরঙ্গশাসিত তটে, কাপ্তানের বাইনাকুলারে, শত্রুজাহাজে, পণ্যে, অন্ধকারে গুপ্ত আর্মাডায় হে সূর্য, আলোকবিন্দু, একই সঙ্গে প্রসারিত করো তোমার জ্যোতির থাবা---- ক্ষুধা ও চুম্বন
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ব্যঙ্গাত্মক
প্রতিদিন দেখ কতদূর থেকে কতশত রোগী আসে কারো জ্বর কারো মাথায় ব্যথা কেউ বসে শুধু কাশে। কারো চুলকানি কারো এলার্জি কারো চোখ টকটকে লাল কারো বদহজম কারো বুকে ব্যথা কারো পেট পুরো বেহাল। এতো রোগী সব চুপ করে বসা কারো ব্যস্ততা নাই আর তোমার একটু গলা ভেঙ্গেছে বলে ইমার্জেন্সি চাই?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ব্যঙ্গাত্মক
আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বদরুল মিয়া মাথায় কী পোকা হল গেল অস্ট্রেলিয়া ফোন করে যখন আমি খোঁজ নিতে যাই অবাক ব্যাপার - তার নিশানাই নাই। সহজ সরল মানুষ বদরুল মিয়া পিছলা খেয়ে পড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া গিয়া।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রকৃতিমূলক
চা বাগানে মেয়েরা কই তুলছে? ও আচ্ছা গাছে গাছে টি-ব্যাগ ঝুলছে!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
-হ্যালো, কে বলছ? -আমি। -আমি কে? -আমি রাজিব। -আজিব? -আজিব না রাজিব। র আকার রা জ ইকারে জি- -র আকারে রা, গ ইকারে গি? -না না। গ ইকারে গি না জ ইকারে জি। জিলাপির জি। -খিলাপীর খি? -খিলাপীর খি না, জিলাপীর জি। জ ইকারে জি, ল আকারে লা- -জ ইকারে জি, ম আকারে মা? -না না। ম আকারে মা না। ল আকারে লা। লাটাইয়ের লা।– -ঘাটাইয়ের ঘা? -ঘাটাইয়ের ঘা না। লাটাইয়ের লা। ল আকারে লা, ট আকারে টা- -ল আকারে লা চ আকারে চা? -না না। চ আকারে চা না। ট আকারে টা। টাকুয়ার টা। -মাকুয়ার মা? -মাকুয়ার মা না। টাকুয়ার টা। ট আকারে টা ক উকারে কু- -ট আকারে টা, ল উকারে লু? -না না। ল উকারে লু না। ক উকারে কু। কুমিরের কু। -ভুমিরের ভু? -ভুমিরের ভু না। কুমিরের কু। ক উকারে কু, মু ইকারে মি- -ক উকারে কু, প ইকারে পি? -না না। প ইকারে পি না, ম ইকারে মি। মিছিলের মি। -পিছিলের পি? -পিছিলের পি না। মিছিলের মি। ম ইকারে মি, ছ ইকারে ছি- -ম ইকারে মি, জ ইকারে জি? -না না। জ ইকারে জি না, ছ ইকারে ছি। ছিয়াশির ছি। -তিরাশির তি? (টেলিফোনে কথা বলবে আরো? কী নিয়ে শুরু করেছিল এখন মনে নাই কারো)
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ছড়া
ডিটেকটিভের চাকরি আমার মানুষকে ফলো করা কাজ পায়ের চিহ্ন ধরে হেঁটে হেঁটে এখানে পৌঁছেছি আজ। (চাকরিটা মনে হয় ছেড়েই দেব!)
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ছড়া
আমার চাচা বেশ বয়স্ক সমস্যা একটাই- খুব অন্যমনস্ক। বাইরে থেকে যখন আসে,তখন ময়লা থাকে পায় হাঁটতে হাঁটতে আমার চাচা কোনদিকে যে যায়!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
চিন্তামূলক
দেশের ডাকে সাড়া দিলাম সবাই বলল বেশ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলাম সবাই হেসেই শেষ।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
সেদিন পিউটার কিনতে গেলাম বাজারে ঘুরে দেখি দোকানে দাম চায় হাজারে কিছুতেই বেশি না শুধু হবে কম,কী এক ধানাই পানাই কম-পিউটারে হবে না, আমার বেশি-পিউটার চাই!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
-চাবি ইংরেজি কী? -কী। -চাবি ইংরেজি। -বললাম তো। -কী বললে? -চাবি ইংরেজি। -কখন বললে? -এখন বললাম। -কী বললে? -ঠিক বলেছ। -ঠিক বলেছি? -হ্যাঁ। -কী ঠিক বলেছি? -চাবি ইংরেজি।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
ট্রাফিক পুলিশ বলে লাল লাইটে কেন গেলে চলে? আমি বললাম লাল তো মোটেই নয় জোরে চললে লাল রঙকে সবুজ মনে হয়!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
Tiger মানে বাঘ      Bug মানে পোকা Flower মানে ফুল    Fool মানে বোকা Horn মানে শিং       Sing মানে গাওয়া Brick মানে ইট        Eat মানে খাওয়া Snake মানে সাপ    Sharp মানে চোখা Nail মানে নখ         Knock মানে টোকা ডান মানে Right      Write মানে লেখা People মানে লোক  Look মানে দেখা ময়দা মানে Flour     Flower মানে ফুল Color মানে রং        Wrong মানে ভুল নেতা মানে Leader  Ladder মানে মই Chest মানে বুক      Book মানে বই তোরণ মানে Gate   Get মানে পাই কিন্তু মানে But         Butt মানে... (থাক থাক, আর দরকার নাই!)
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
ঘুম থেকে উঠেই কী দেখলাম আজ কেমন করে করলে তুমি এই সর্বনাশা কাজ? শাড়ি দিয়ে প্যাঁচ লাগিয়ে গলায় দিলে দড়ি দুঃখে আমার বুক ফেটে যায় কী এখন করি? এই দুঃখ এখন আমি কেমনে সইতে পারি? তুমি কী জানতে না গো, এইটা আমার মোস্ট ফেবারিট শাড়ি?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
“সুং, সিং এ সং সেং সাং” সুং স্যাং এ সং সিইং সুং স্যাং এ সং সোং স্যাং এ সং।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ছড়া
মরি আমি মরি এই বলে হরি দিল গলায় দড়ি। (কী হল? হাসছ কেন? সমস্যাটা কী?)
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
গল্প পুরো সত্য গহীন এক জঙ্গলে থাকতো বড় দৈত্য। ভাটার মত চোখ ছিল তার মুলার মত দাঁত ঢেঁকির মত পা ছিল আর গাছের মত হাত। সেই রাজ্যের রাজকন্যা কাজল কালো চোখ রূপ দেখে তার মুগ্ধ ছিল রাজ্যের সব লোক। একদিন সেই রাজকন্যা রাজপ্রাসাদের ছাদে সখী নিয়ে কাজল বরণ চুলগুলো তার বাঁধে। হাউ মাউ খাউ বলে হঠাৎ সেই দৈত্য ছুটে আসে সখীরা সব পালায় ভয়ে রইল না কেউ পাশে। দৈত্য তখন রাজকন্যার চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল জঙ্গলে তার ঘরে। রাজকন্যা হারিয়ে গেছে রাজ্যে নামে শোক মাথা চাপড়ে কাঁদতে থাকে রাজ্যের সব লোক। ভিনদেশি এক রাজপুত্র খবর পেয়ে আসে বলল তখন ভয় নেই গো আমি আছি পাশে। পথে পথে ঘুরে বেড়ায় রাজপুত্র সেই রাজকন্যা খুঁজে বেড়ায় কোথাও দেখা নেই। বনের পশু, গাছের পাখি নদীর মাঝে মাছ নীল আকাশে সাদা মেঘ বনের মাঝে গাছ। রাজকন্যার হদিস নেই রাজ্যতে হই চই। সবার শেষে গহীন বনে রাজপুত্র যায় মৌমাছিদের মুখে তখন দৈত্যের খোঁজ পায়। রাজপুত্র ছুটে চলল হাতে তলোয়ার ভয়ংকর সেই দৈত্যকে মারতে হবে তার। কী ভয়ানক যুদ্ধ হল নেই তুলনা তার পাহাড় নদী পড়ল ধসে সবকিছু ছারখার দৈত্য শেষে মারা পড়ল মাথা পড়ল কাটা রক্ত মুছে রাজপুত্র করল শুরু হাঁটা। ঘরের মাঝে বন্দি ছিল রাজকন্যা সেই রাজপুত্র বলল তারে আর তো ভয় নেই। রাজকন্যা মুক্ত হল মুখে মধুর হাসি বলল, ওগো রাজপুত্র তোমায় ভালোবাসি। গল্প শুনে মুগ্ধ সবাই, নিজের ঘরে যায় ছোট্ট টুকুন একাই শুধু মাথাটা চুলকায়। ভাইকে বলে, ভাইয়া তুই একটা কথা বল, রাজকন্যা কেন দিল না একখান মিসকল?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
চিন্তামূলক
দুইজন বাচ্চার ঝগড়া চলছে ডাবলিউ লেখা আছে একজন বলছে। এম লেখা, এম এটা অন্যজন বলল, তারপর কী ভীষণ চেঁচামেচি চলল। দুজনেই ঠিক তারা,যদি সেটা জানতো ঝগড়া থামিয়ে তবে হয়ে যেত শান্ত। উল্টো দিক থেকে দেখলেই জানবে- জীবনটাও এরকম কবে তারা মানবে?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
"যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলে পাইতে পার অমূল্য রতন।" (এমন বোকা আমি দেখি নাই তোমার মতন!) উড়াইয়া দেখি ছাই পাবলিকের পিটা খাই? ভেবেছটা কী আমার মাথায় বুঝি কোনো ঘিলু নাই?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ছড়া
মাটি থেকে ভেসে থাকা সোজা একটা কাজ কেমন করে করতে হয় শিখিয়ে দেব আজ। তুমি তুলবে আমাকে এই রকম করে, আমি তুলব তোমাকে শক্ত করে ধরে। তারপরে দুইজন দুইজনকে ধরে রাখব মাটির উপরে।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
ক্রিকেট মানে যদি ঝিঁঝিঁ পোকা হয় ফুটবল মানে কেন তেলাপোকা নয়? ব্যাট মানে যদি চামচিকে হয় বল মানে তবে কেন ইন্দুর নয়? ‘হায়’ মানে যদি কী খবর হয় হুতাশ মানে কেন ভালো আছ নয়? স্যান্ডেল মানে যদি চন্দন হয় জুতা মানে তবে কেন সেগুন নয়? লং মানে যদি লম্বা হয় এলাচি মানে কেন বেঁটে নয়? রাগ মানে যদি কার্পেট হয় গোস্বা মানে কেন বিছানা নয়? লাভ মানে যদি ভালোবাসা হয় লোকসান কেন তবে খুনোখুনি নয়? বুক মানে যদি বই হয় পেট মানে কেন খাতা নয়? লাফ মানে যদি হাসাহাসি হয় ঝাঁপ মানে কেন কাঁপাকাপি নয়? পেপার মানে যদি গোলমরিচ হয় ম্যাগাজিন মানে কেন জিরা –বাটা নয়? টক মানে যদি কথা হয় ঝাল মানে কেন তবে বার্তা নয়? টি মানে যদি চা হয় ইউ মানে কেন কফি নয়? মামা মানে যদি আম্মু হয় মামী মানে কেন আব্বু নয়? গান মানে যদি বন্দুক হয় বাজনা মানে কেন রাইফেল নয় ফুল মানে যদি বেকুব হয় কলি মানে তবে কেন গাধা নয়? গুন মানে যদি গুণ্ডা হয় ভাগ মানে তবে কেন বদমাশ নয়? আই মানে যদি চোখ হয় জে মানে কেন তবে নাক নয়? পি মানে যদি হিস্যু করা হয় কিউ মানে তবে কেন “ইয়ে” করা নয়? এরকম কত প্রশ্ন,চোখে ঘুম নাই উত্তর খুঁজতে আমি কার কাছে যাই?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ব্যঙ্গাত্মক
আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে যারা কোথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। তর্ক না করে তারা কিলঘুষি দেবে চোখের পলকে সব কেড়ে ধরে নেবে। লাঠির আঘাতে তারা মাথা ফাটাবে শার্টের কলার ধরে পথে হাঁটাবে। অপমান করে তারা লোক হাসাবে চাকু দিয়ে ঘা মেরে ভুঁড়ি ফাঁসাবে। আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে যাদের ভয়ে সব ঘরেতে রবে।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
জয় কয়, ভয় হয়।           কয় toy লয়? চয় কয়,বয়।                 ৯ টায় লয় জয় বয়।                      চয় ৯ টায় লয় চয় কয়, নয়,ভয় নয়।      ৬ টায় থয় তয় ভয় ক্ষয় হয়। জয় toy ধয় (জয় boy চয় boy নয়)   চয় সয় চয় জয় রয়                   তয়? শয় শয় toy                  (আর কতো?এখানেই শেষ!) জয় toy লয়।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
রূপক
মেয়েটার নাম হল হাফসা যখনই ছবি তোলে, ছবি ওঠে আবছা। ক্যামেরাটা ঠিক আছে হাফসা মেয়েটাই আসলে বেশ ঝাপসা।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
কিছুতেই রাজি নয় বল বাবাজি নারাজি নারাজি নারাজি। হাত থেকে দান নেই বল দেখি চান নাদান নাদান নাদান। কোনভাবে খুশি নয় বল চেপে রোশ নাখোশ নাখোশ নাখোশ। একেবারে পাক নয় বল দিয়ে হাঁক নাপাক নাপাক নাপাক। কিছুতেই ছাড়ে না যে বল দিয়ে জোর নাছোড় নাছোড় নাছোড়। এতটুকু টক নয় বল ঠকাঠক নাটক নাটক নাটক। (বেকুবের ধাড়ী দেখি! কী বলে এসব?)
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
চিন্তামূলক
যাদের আছে টাকা সবাইকে দিতে তাদের পকেট হল ফাঁকা। আমার কিছুই নেই কেমন করে কাউকে কিছু দেই? শুধু জানি বুকের ভিতর ঠাসা আছে শুধু সলিড ভালোবাসা। সেখান থেকে তোমায় দিলাম কিছু যখন তুমি হেঁটে এলে আমার পিছু পিছু। পথের পাশে ছোট মেয়েটা বিক্রি করে ফুল তাকেও কিছু দিতে হল হয়নি কোনো ভুল। বুকের থেকে ভালোবাসা খাবলা দিয়ে নেই ছোট ভাইটা দুষ্টু ভারি তাকে কিছু দেই। মা’কে দিলাম আঁচলখানা ভরে বাবার জন্য ঢেলে দিলাম রইল যেটুক পড়ে। ভেবেছিলাম দিয়ে থুয়ে সবই বুঝি যাবে ভালোবাসা খুঁজলে পরে আর কিছু কই পাবে? কিন্তু দেখো অবাক ব্যাপার কতো যত দিচ্ছি কমছে না তো,বাড়তে থাকে তত! বুকের ভেতর এক্কেবারে ঠাসা নূতন করে জমা হল সলিড ভালোবাসা।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ছড়া
১ লা থাকি একলা শুই নিজের কাপড় নিজেই ২ খাটাখাটনি রাত্রি ৩ সঙ্গী খালি মুড়ির টিন। চেষ্টা করি বাঁ ৪ পাছ দিয়ে সব পাচার। বাইরে গেলে চান্দি ৬ এতো বেয়াদপ কেমনে হয়? ঝগড়া করিস আমার ৭ ভাগ ব্যাটা তুই জলদি ৮ মাঝে মাঝে লাগে ভয় কেউ দেখি আর মানুষ ৯ সবার মাঝেই অসন্তোষ যত ১০ এই নন্দঘোষ?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রকৃতিমূলক
“অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়।” সত্যি? তোমরা কই জান পৃথিবীটা ডুবে যাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায়? অভাগারা,তোমরা কোথায়? কোন জায়গায়? তাড়াতাড়ি চলে আস সমুদ্রের পাড় তোমাদের দেশে এখন খুব দরকার। অপূর্ব এই সুযোগ পানি কমাবার চলে আস কুয়াকাটা কক্সবাজার।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
রূপক
কলাটা কেমন করে খাই? আমার মুখটা এতো ছোট কলা ঢোকানোর জায়গাই তো নাই!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
হাস্যরসাত্মক
অ   অজ্ঞান পার্টি  অজ্ঞান পার্টি আসছে ঐ আ   আগুন      আগুন দেব আন বই। ই    ইভ টিজিং   ইভ টিজিং ভারি মজা ঈ    ঈর্ষা        ঈর্ষা করা কত সোজা। উ   উত্তম মধ্যম   উত্তম মধ্যম খেতে চাও ঊ   ঊর্ধ্বশ্বাস      ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে যাও। ঋ    ঋণ খেলাপি    ঋণ খেলাপি সবার সেরা পুরো দেশ ছ্যাড়া ভ্যাড়া। এ    এসিড       এসিড দিয়ে অত্যাচার ঐ    ঐশ্বর্য       ঐশ্বর্যে অধিকার ও    ওত        ওত পেটে মানুষ খুন ঔ    ঔদ্ধত্য      ঔদ্ধত্য বড় গুণ ক    কিডন্যাপ    কিডন্যাপে পয়সা আনে খ    খুন        খুন করলেই সবাই মানে গ    গুলি       গুলি করি দিনরাত ঘ    ঘুষি       ঘুষি মেরে কুপোকাৎ ঙ    ঠ্যাঙ       এক লাথিতে ভাঙব ঠ্যাঙ বললে কথা মারব ল্যাঙ। চ   চোর       চোরে চোরে মাসতুতো ভাই ছ    ছিনতাই     সকাল বিকাল ছিনতাই জ    জেল         জেলের ভাত খাওয়া চাই ঝ    ঝগড়া        ঝগড়া করে শান্তি পাই ঞ    লাঞ্ছনা       লাঞ্ছনাতে ফূর্তি হয় দেখলে মোরে লাগবে ভয়। ট    টেরর        টপ টেরর পেশা ঠ    ঠকানো       লোক ঠকানো নেশা ড    ডাকাতি       ডাকাতির ভক্ত ঢ     ঢিল         ঢিল দিয়ে রক্ত। ণ    মরণ        মরণ হবে আমার হাতে আয় সবে আয় আমার সাথে। ত   তলোয়ার      তলোয়ারে কচু কাটা থ    থাপ্পড়        থাপ্পড়ে গাল ফাটা দ    দা           দা দিয়ে দেব কোপ ধ   ধোলাই       ধোলাই দিয়ে বংশ লোপ ন    নেশা         নেশা করি শৈশবে মানুষজন কই সবে? প    পিটিয়ে        পিটিয়ে ফেলব লাশ ফ    ফাঁসি        ফাঁসি হবে, সর্বনাশ। ব    বোমাবাজি     বোমাবাজি চলবে আজ ভ    ভয়         ভয় দেখিয়ে করব কাজ। ম    মদ         মদ গাঁজার কারবার সুখ শান্তি ছারখার। য    যৌতুক       যৌতুক ছাড়া বিয়ে নয় র    রগ           রগ কাটার হবে  জয়। ল     লাশ           লাশ ফেলব একশ দশ ব     ধ্বস           সামনে পিছে নামবে ধ্বস। শ     শয়তানি        শয়তানিতে সবার আগে দেখলেই তো ভয় লাগে! ষ     ষড়যন্ত্র         ষড়যন্ত্রে হাতে খড়ি স     সন্ত্রাসী          সন্ত্রাসীদের দেশ গড়ি হ      হত্যা           হত্যাকারীর মুক্তি চাই ড়      হাড়          হাড় মাংস চিবিয়ে খাই। ঢ়      মাঢ়ি          মাঢ়ি   দাঁত কিড়মিড় সারা শরীর চিড়বিড়। য়      ভয়ানক        কী ভয়ানক দিলাম মার ৎ     চিৎকার         হই চই চিৎকার ং    আতংক         আতংকে তো উল্লাস ঃ    দুঃখ           দুঃখ পাবি গলায় ফাঁস ঁ     ফাঁদ           ফাঁদে ফেলে যন্ত্রণা শয়তানদের মন্ত্রণা!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ছড়া
গতরাতে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেছে মতিকে ধরতে তো পারেই,খবর পেয়ে গেছো কোনো এক গতিকে। একটা বেআইনি কাজ করেছে মতি,করেছে সে গোপনে কেন যে করতে গেল!কে জানে কী ছিল তার মনে। কাজটা যে বেআইনি সেটা তো গোপন কিছু নয় মতি কেন করতে গেল,বুকে তার নাই এতোটুকু ভয়? না জানি কার পাল্লায় পড়েছিল আমাদের বোকা সোকা মতি এখন তাকে কে বাঁচাবে?কে বলবে,কী হবে তার গতি? মতির এই সর্বনাশ খবর শুনে সবার মাথায় বাজ জানত না সে,শূন্য দিয়ে ভাগ দেওয়া বেআইনি কাজ?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ছড়া
ছাতা ছাড়া বের হয়েছে গেণ্ডারিয়ার মতি হঠাৎ দেখি বৃষ্টি এল কী হবে তার গতি? শার্ট ভিজল প্যান্ট ভিজল ভিজল জুতো জোড়া মাথা ভিজল ঘাড় ভিজল ভিজল পায়ের গোড়া। নাক ভিজল চোখ ভিজল ভিজল কানের লতি বৃষ্টিতে আজ ধরা খেল গেণ্ডারিয়ায় মতি। ভিজে হল চুপচুপে সে ভিজল সাড়া গা সবকিছু ভিজলেও তার চুল ভিজল না!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
নীতিমূলক
পিংকিকে জিজ্ঞেস করে সুজন বল তো মেয়ে বন্ধু তোমার ক’জন? পিংকি বলে, হ্যাঁ একজনই তো,পাশের বাসার মেয়ে। শুনে সুজন হা হা করে হাসে চোখ দুটো তার বড় হল ঘোর অবিশ্বাসে। মাত্র একজন,কী আজব ব্যাপার বন্ধু আমার পাকা সাতাশ হাজার! ফেসবুকে তাদের সাথেই থাকি বন্ধু ছাড়া এই জীবনের অর্থ আছে নাকী? আমি যখন স্ট্যাটাস দিতে চাই, দেবার আগেই শত শত লাইক পেয়ে যাই। পিংকি শুনে অবাক হল ভারি বাসায় তখন ফিরল তাড়াতাড়ি। বন্ধু মেয়েটির গলা ধরে বলে তুই কথা দে আমার কিছু হলে, তুই থাকবি আমার পাশে পাশে শুনে বন্ধু হি হি করে হাসে। হেসে হেসে বলে, হঠাৎ করে যাসনে যেন চলে। ধরতে পারি ছুঁতে পারি একটা বন্ধু চাই ডিজিটাল হাজার বন্ধুর কোনো দরকার নাই!
বুদ্ধদেব বসু
মানবতাবাদী
আজ রাত্রে বালিশ ফেলে দাও, মাথা রাখো পরস্পরের বাহুতে, শোনো দূরে সমুদ্রের স্বর, আর ঝাউবনে স্বপ্নের মতো নিস্বন, ঘুমিয়ে পোড়ো না, কথা ব’লেও নষ্ট কোরো না এই রাত্রি- শুধু অনুভব করো অস্তিত্ব। কেন না কথাগুলোকে বড়ো নিষ্ঠুরভাবে চটকানো হ’য়ে গেছে, কোনো উক্তি নির্মল নয় আর, কোনো বিশেষণ জীবন্ত নেই; তাই সব ঘোষণা এত সুগোল, যেন দোকানের জানালায় পুতুল- অতি চতুর রবারে তৈরি, রঙিন। কিন্তু তোমরা কেন ধরা দেবে সেই মিথ্যায়, তোমরা যারা সম্পন্ন, তোমরা যারা মাটির তলায় শস্যের মতো বর্ধিষ্ণু? বোলো না ‘সুন্দর’, বোলো না ‘ভালোবাসা’, উচ্ছ্বাস হারিয়ে ফেলো না নিজেদের- শুধু আবিষ্কার করো, নিঃশব্দে। আবিষ্কার করো সেই জগৎ, যার কোথাও কোনো সীমান্ত নেই, যার উপর দিয়ে বাতাস ব’য়ে যায় চিরকালের সমুদ্র থেকে, যার আকাশে এক অনির্বাণ পুঁথি বিস্তীর্ণ- নক্ষত্রময়, বিস্মৃতিহীন। আলিঙ্গন করো সেই জগৎকে, পরষ্পরেরচেতনার মধ্যে নিবিড়। দেখবে কেমন ছোটো হ’তেও জানে সে, যেন মুঠোর মধ্যে ধ’রে যায়, যেন বাহুর ভাঁজে গহ্বর, যেখানে তোমরা মুখ গুঁজে আছো অন্ধকারে গোপনতায় নিস্পন্দ- সেই একবিন্দু স্থান, যা পবিত্র, আক্রমণের অতীত, যোদ্ধার পক্ষে অদৃশ্য, মানচিত্রে চিহ্নিত নয়, রেডিও আর হেডলাইনের বাইরে সংঘর্ষ থেকে উত্তীর্ণ- যেখানে কিছুই ঘটে না শুধু আছে সব সব আছে- কেননা তোমাদেরই হৃদয় আজ ছড়িয়ে পড়লো ঝাউবনে মর্মর তুলে, সমুদ্রের নিয়তিহীন নিস্বনে, নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে, দিগন্তের সংকেতরেখায়- সব অতীত, সব ভবিষ্যৎ আজ তোমাদের। আমাকে ভুল বুঝোনা। আমি জানি, বারুদ কত নিরপেক্ষ, প্রাণ কত বিপন্ন। কাল হয়তো আগুন জ্বলবে দারুণ, হত্যা হবে লেলিহান, যেমন আগে, অনেকবার, আমাদের মাতৃভুমি এই পৃথিবীর মৃত্তিকায়- চাকার ঘূর্ণনের মতো পুনরাবৃত্ত। তবু এও জানি ইতিহাস এক শৃঙ্খল, আরআমরা চাই মুক্তি, আর মুক্তি আছে কোন পথে, বলো, চেষ্টাহীন মিলনে ছাড়া? মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন, মানুষের সঙ্গে বিশ্বের- যার প্রমাণ, যার প্রতীক আজ তোমরা। নাজমা, শামসুদ্দিন, আর রাত্রির বুকে লুকিয়ে-থাকা যত প্রেমিক, যারা ভোলোনি আমাদের সনাতন চুক্তি, সমুদ্র আর নক্ষত্রের সঙ্গে, রচনা করেছো পরস্পরের বাহুর ভাঁজে আমাদের জন্য এক স্বর্গের আভাস, অমরতায় কল্পনা: আমি ভাবছি তোমাদের কথা আজকের দিনে, সারাক্ষণ- সেই একটি মাত্র শিখা আমার অন্ধকারে, আমার চোখের সামনে নিশান। মনে হয় এই জগৎ-জোড়া দুর্গন্ধ আর অফুরান বিবমিষার বিরুদ্ধে শুধু তোমরা আছো উত্তর, আর উদ্ধার।
বুদ্ধদেব বসু
চিন্তামূলক
দিন মোর কর্মের প্রহারে পাংশু, রাত্রি মোর জ্বলন্ত জাগ্রত স্বপ্নে | ধাতুর সংঘর্ষে জাগো, হে সুন্দর, শুভ্র অগ্নিশিখা, বস্তুপুঞ্জ বায়ু হোক, চাঁদ হোক নারী, মৃত্তিকার ফুল হোক আকাশের তারা | জাগো, হে পবিত্র পদ্ম, জাগো তুমি প্রাণের মৃণালে, চিরন্তনে মুক্তি দাও ক্ষণিকার অম্লান ক্ষমায়, ক্ষণিকেরে কর চিরন্তন | দেহ হোক মন, মন হোক প্রাণ, প্রাণেহোক মৃত্যুর সঙ্গম, মৃত্যু হোক দেহ প্রাণ, মন
বুদ্ধদেব বসু
চিন্তামূলক
কিছুই সহজ নয়, কিছুই সহজ নয় আর | লেখা, পড়া, প্রুফ পড়া, চিঠি লেখা, কথোপকথন, যা-কিছু ভুলিয়ে রাখে, আপাতত, প্রত্যহের ভার – সব যেন, বৃহদরণ্যের মতো তর্কপরায়ণ হ’য়ে আছে বিকল্পকুটিল এক চতুর পাহাড় | সেই যুদ্ধে বার-বার হেরে গিয়ে, ম’রে গিয়ে, মন যখন বলছে ; শুধু দেহ নিয়ে বেঁচে থাকা তার সবচেয়ে নির্বাচিত, প্রার্থনীয়, কেননা তা ছাড়া আর কিছু নেই শান্ত, স্নিগ্ধ, অবিচল প্রীতিপরায়ণ – আমি তাকে তখন বিশ্বস্ত ভেবে, কোনো-এক দীপ্ত প্রেমিকার আলিঙ্গনে সত্তার সারাত্সার ক’রে সমর্পন – দেখেছি দাঁড়িয়ে দূরে, যদিও সে উদার উদ্ধার লুপ্ত ক’রে দিলো ভাবা, লেখা, পড়া,কথোপকথন, তবু প্রেম, প্রেমিকেরে ঈর্ষা ক’রে, নিয়ে এলো ক্রূর বরপণ – দুরহ, নূতনতর, ক্ষমাহীন দায়িত্বের ভার | কিছুই সহজ নয়, কিছুই সহজ নয় আর |
বুদ্ধদেব বসু
চিন্তামূলক
আমি যদি ম’রে যেতে পারতুম এই শীতে, গাছ যেমন ম’রে যায়, সাপ যেমন ম’রে থাকে সমস্ত দীর্ঘ শীত ভ’রে।শীতের শেষে গাছ নতুন হ’য়ে ওঠে, শিকড় থেকে উর্ধ্বে বেয়ে ওঠে তরুণ প্রাণরস, ফুটে ওঠে চিক্কণ সবুজ পাতায়-পাতায় আর অজস্র উদ্ধত ফুলে।আর সাপ ঝরিয়ে দেয় তার খোলশ, তার নতুন চামড়া শঙ্খের মতো কাজ-করা; তার জিহ্বা ছুটে বেরিয়ে আসে আগুনের শিখার মতো, যে-আগুন ভয় জানে না।কেননা তারা ম’রে থাকে সমস্ত দীর্ঘ শীত ভ’রে, কেননা তারা মরতে জানে।যদি আমিও ম’রে থাকতে পারতুম— যদি পারতুম একেবারে শূন্য হ’য়ে যেতে, ডুবে যেতে স্মৃতিহীন, স্বপ্নহীন অতল ঘুমের মধ্যে— তবে আমাকে প্রতি মুহূর্তে ম’রে যেতে হ’তো না এই বাঁচার চেষ্টায়, খুশি হবার, খুশি করার, ভালো লেখার, ভালোবাসার চেষ্টায়।
বুদ্ধদেব বসু
মানবতাবাদী
আজ রাত্রে বালিশ ফেলে দাও, মাথা রাখো পরস্পরের বাহুতে, শোনো দূরে সমুদ্রের স্বর, আর ঝাউবনে স্বপ্নের মতো নিস্বন, ঘুমিয়ে পোড়ো না, কথা ব’লেও নষ্ট কোরো না এই রাত্রি- শুধু অনুভব করো অস্তিত্ব।কেন না কথাগুলোকে বড়ো নিষ্ঠুরভাবে চটকানো হ’য়ে গেছে, কোনো উক্তি নির্মল নয় আর, কোনো বিশেষণ জীবন্ত নেই; তাই সব ঘোষণা এত সুগোল, যেন দোকানের জানালায় পুতুল- অতি চতুর রবারে তৈরি, রঙিন।কিন্তু তোমরা কেন ধরা দেবে সেই মিথ্যায়, তোমরা যারা সম্পন্ন, তোমরা যারা মাটির তলায় শস্যের মতো বর্ধিষ্ণু? বোলো না ‘সুন্দর’, বোলো না ‘ভালোবাসা’, উচ্ছ্বাস হারিয়ে ফেলো না নিজেদের- শুধু আবিষ্কার করো, নিঃশব্দে।আবিষ্কার করো সেই জগৎ, যার কোথাও কোনো সীমান্ত নেই, যার উপর দিয়ে বাতাস ব’য়ে যায় চিরকালের সমুদ্র থেকে, যার আকাশে এক অনির্বাণ পুঁথি বিস্তীর্ণ- নক্ষত্রময়, বিস্মৃতিহীন।আলিঙ্গন করো সেই জগৎকে, পরষ্পরের চেতনার মধ্যে নিবিড়। দেখবে কেমন ছোটো হ’তেও জানে সে, যেন মুঠোর মধ্যে ধ’রে যায়, যেন বাহুর ভাঁজে গহ্বর, যেখানে তোমরা মুখ গুঁজে আছো অন্ধকারে গোপনতায় নিস্পন্দ-সেই একবিন্দু স্থান, যা পবিত্র, আক্রমণের অতীত, যোদ্ধার পক্ষে অদৃশ্য, মানচিত্রে চিহ্নিত নয়, রেডিও আর হেডলাইনের বাইরে সংঘর্ষ থেকে উত্তীর্ণ- যেখানে কিছুই ঘটে না শুধু আছে সবসব আছে- কেননা তোমাদেরই হৃদয় আজ ছড়িয়ে পড়লো ঝাউবনে মর্মর তুলে, সমুদ্রের নিয়তিহীন নিস্বনে, নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে, দিগন্তের সংকেতরেখায়- সব অতীত, সব ভবিষ্যৎ আজ তোমাদের।আমাকে ভুল বুঝোনা। আমি জানি, বারুদ কত নিরপেক্ষ, প্রাণ কত বিপন্ন। কাল হয়তো আগুন জ্বলবে দারুণ, হত্যা হবে লেলিহান, যেমন আগে, অনেকবার, আমাদের মাতৃভুমি এই পৃথিবীর মৃত্তিকায়- চাকার ঘূর্ণনের মতো পুনরাবৃত্ত।তবু এও জানি ইতিহাস এক শৃঙ্খল, আর আমরা চাই মুক্তি, আর মুক্তি আছে কোন পথে, বলো, চেষ্টাহীন মিলনে ছাড়া? মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন, মানুষের সঙ্গে বিশ্বের- যার প্রমাণ, যার প্রতীক আজ তোমরা।নাজমা, শামসুদ্দিন, আর রাত্রির বুকে লুকিয়ে-থাকা যত প্রেমিক, যারা ভোলোনি আমাদের সনাতন চুক্তি, সমুদ্র আর নক্ষত্রের সঙ্গে, রচনা করেছো পরস্পরের বাহুর ভাঁজে আমাদের জন্য এক স্বর্গের আভাস, অমরতায় কল্পনা :আমি ভাবছি তোমাদের কথা আজকের দিনে, সারাক্ষণ- সেই একটি মাত্র শিখা আমার অন্ধকারে, আমার চোখের সামনে নিশান। মনে হয় এই জগৎ-জোড়া দুর্গন্ধ আর অফুরান বিবমিষার বিরুদ্ধে শুধু তোমরা আছো উত্তর, আর উদ্ধার।
বুদ্ধদেব বসু
প্রেমমূলক
ওগো চপল-নয়না সুন্দরী তোলো মোর পানে তব দুই আঁখি, মম শিয়রের কাছে গুঞ্জরি’ গাও সকল অগীত সঙ্গীতে মোর দেহমন রও ঢাকি তব স্বপন-আবেশ-হিল্লোলে, চির- নিত্য-নূতন ভঙ্গীতে ঢেউ তোলো মোর প্রাণ-সিন্ধুতে, সুখে উচ্ছসিয়া ওঠে কল্লোলে ছোটে দুই তট দেশ লঙ্ঘিয়া, চাহে গ্রাসিতে পূর্ণ ইন্দুকে মহা আকাশের দ্যায় রঙ্গিয়া ওগো মোর পিপাসিত যৌবনে কর শান্ত একটি চুম্বনে।
বুদ্ধদেব বসু
সনেট
যে-বাণীবিহঙ্গে আমি আনন্দে করেছি অভ্যর্থনা ছন্দের সুন্দর নীড়ে বার-বার, কখনো ব্যর্থ না হোক তার বেগচ্যুত, পক্ষমুক্ত বায়ুর কম্পন জীবনের জটীল গ্রন্থিল বৃক্ষে ; যে-ছন্দোবন্ধন দিয়েছি ভাষারে, তার অন্তত আভাস যেন থাকে বত্সরের আবর্তনে, অদৃষ্টের ক্রূর বাঁকে-বাঁকে, কুটিল ক্রান্তিতে ; যদি ক্লান্তিআসে, যদি শান্তি যায়, যদি হৃত্পিণ্ড শুধু হতাশার ডম্বরু বাজায়, রক্ত শোনে মৃত্যুর মৃদঙ্গ শুধু;— তবুও মনের চরম চুড়ায় থাক সে-অমর্ত্য অতিথি-ক্ষণের চিহ্ন, যে-মূহূর্তে বাণীর আত্মারে জেনেছি আপন সত্তা ব’লে, স্তব্ ধ মেনেছি কালেরে, মূঢ় প্রবচন মরত্বে ; খন মন অনিচ্ছার অবশ্য বাঁচার ভুলেছে ভিষণ ভার, ভুলে গেছে প্রত্যহের ভার |
বুদ্ধদেব বসু
প্রেমমূলক
কী ভালো আমার লাগলো আজ এই সকালবেলায় কেমন করে বলি? কী নির্মল নীল এই আকাশ, কী অসহ্য সুন্দর, যেন গুণীর কণ্ঠের অবাধ উন্মুক্ত তান দিগন্ত থেকে দিগন্তে; কী ভালো আমার লাগলো এই আকাশের দিকে তাকিয়ে; চারদিক সবুজ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা, কুয়াশায় ধোঁয়াটে, মাঝখানে চিল্কা উঠছে ঝিলকিয়ে। তুমি কাছে এলে, একটু বসলে, তারপর গেলে ওদিকে, স্টেশনে গাড়ি এসে দাড়িয়েঁছে, তা-ই দেখতে। গাড়ি চ’লে গেল!- কী ভালো তোমাকে বাসি, কেমন করে বলি? আকাশে সূর্যের বন্যা, তাকানো যায়না। গোরুগুলো একমনে ঘাস ছিঁড়ছে, কী শান্ত! -তুমি কি কখনো ভেবেছিলে এই হ্রদের ধারে এসে আমরা পাবো যা এতদিন পাইনি? রূপোলি জল শুয়ে-শুয়ে স্বপ্ন দেখছে; সমস্ত আকাশ নীলের স্রোতে ঝরে পড়ছে তার বুকেরউপর সূর্যের চুম্বনে।-এখানে জ্ব’লে উঠবে অপরূপ ইন্দ্রধণু তোমার আর আমার রক্তের সমুদ্রকে ঘিরে কখনো কি ভেবেছিলে? কাল চিল্কায় নৌকোয় যেতে-যেতে আমরা দেখেছিলাম দুটো প্রজাপতি কতদূর থেকে উড়ে আসছে জলের উপর দিয়ে।- কী দুঃসাহস! তুমি হেসেছিলে আর আমার কী ভালো লেগেছিল। তোমার সেই উজ্জ্বল অপরূপ মুখ। দ্যাখো, দ্যাখো, কেমন নীল এই আকাশ-আর তোমার চোখে কাঁপছে কত আকাশ, কত মৃত্যু, কত নতুন জন্ম কেমন করে বলি।
রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণী
মানবতাবাদী
সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা, দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা। দধীচি কি তাহার চেয়ে সাধক ছিল বড়? পুণ্য অত হবে নাক সব করিলে জড়। মুক্তিকামী মহাসাধক মুক্ত করে দেশ, সবারই সে অন্ন জোগায় নাইক গর্ব লেশ। ব্রত তাহার পরের হিত, সুখ নাহি চায় নিজে, রৌদ্র দাহে শুকায় তনু, মেঘের জলে ভিজে। আমার দেশের মাটির ছেলে, নমি বারংবার তোমায় দেখে চূর্ণ হউক সবার অহংকার।
রোকনুজ্জামান খান
ছড়া
বাক বাক্‌ কুম পায়রা মাথায় দিয়ে টায়রা বউ সাজবে কাল কি চড়বে সোনার পালকি।
রোকনুজ্জামান খান
ছড়া
হাসতে নাকি জানেনা কেউ কে বলেছে ভাই? এই শোন না কত হাসির খবর বলে যাই।খোকন হাসে ফোঁকলা দাঁতে চাঁদ হাসে তার সাথে সাথেকাজল বিলে শাপলা হাসে হাসে সবুজ ঘাস। খলসে মাছের হাসি দেখে হাসে পাতিহাঁস।টিয়ে হাসে, রাঙ্গা ঠোঁটে, ফিঙ্গের মুখেও হাসি ফোটেদোয়েল কোয়েল ময়না শ্যামা হাসতে সবাই চায় বোয়াল মাছের দেখলে হাসি পিলে চমকে যায়।এত হাসি দেখেও যারা গোমড়া মুখে চায়, তাদের দেখে পেঁচার মুখেও কেবল হাসি পায়।
রজনীকান্ত সেন
নীতিমূলক
বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই- “কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই; আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা ‘পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।” বাবুই হাসিয়া কহে- “সন্দেহ কি তায় ? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়; পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।”
রজনীকান্ত সেন
নীতিমূলক
বিজ্ঞ দার্শনিক এক আইল নগরে, ছুটিল নগরবাসী জ্ঞান-লাভ তরে; সুন্দর-গম্ভীর-মূর্তি, শান্ত-দরশন, হেরি সবে ভক্তি ভরে বন্দিল চরণ। সবে কহে, “শুনি, তুমি জ্ঞানী অতিশয়, দু’একটি তত্ত্ব-কথা কহ মহাশয়।” দার্শনিক বলে, “ভাই, কেন বল জ্ঞানী ? ‘কিছু যে জানি না’, আমি এই মাত্র জানি।”
রজনীকান্ত সেন
নীতিমূলক
নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল, তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল, গাভী কভু নাহি করে নিজ দুগ্ধ পান, কাষ্ঠ, দগ্ধ হয়ে, করে পরে অন্নদান, স্বর্ণ করে নিজরূপে অপরে শোভিত, বংশী করে নিজস্বরে অপরে মোহিত, শস্য জন্মাইয়া, নাহি খায় জলধরে, সাধুর ঐশ্বর্য শুধু পরহিত-তরে।